মোঃ শাজনুস শরীফ, বরগুনা : বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বাতাসে গতিবেগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বৃষ্টিপাতের মাত্রা। এদিকে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে দশটার পর থেকেই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বরগুনায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। নদীতে ভাটা থাকায় পানি এখনও বিপদসীমার নিচে থাকলেও জোয়ারের সময় পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আরও জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আজ দুপুরের দিকে পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। এর আশপাশে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। মিধিলি’র প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়াসহ ভারি বর্ষণ হতে পারে। পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র ৩টি মুজিব কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য ৫০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়াও নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলোর ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বরগুনায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ৯ হাজার ৬১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি মোকাবিলায় ৬ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা, ৪৩০ টন চাল, ৯৬ বান্ডিল ঢেউটিন ও ২০০০ পিস কম্বল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুত কর্মসূচি (সিপিপি) টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, বরগুনা উপকূলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার দিনভর ঘুরে বৃষ্টি হলেও শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। দমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে গাছপালার গোড়া নরম হয়ে যায়। সবাইকে নিরাপদে থাকতে হবে।

এদিকে উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটায় স্থলভাগে যেমন আতঙ্ক বিরাজ করছে তেমনি সাগর উত্তাল থাকায় সাগরে থাকা জেলেদের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাগর থেকে মাছ ধরা ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিলেও অন্তত ৩০০ জেলে ও ২০টি ট্রলার এখনও নিরাপদ স্থানে আসেনি।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় অনেক মাছ ধরা ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এখনো ২০ ট্রলারসহ অন্তত ৩০০ জেলে নিরাপদে আসেনি। আমরা তাদের নিয়ে চিন্তিত।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, মিধিলি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত। সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম জানান, সংকেত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানীয়ও বাসিন্দাদের আশ্রয়ে আনা হবে। সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। চরাঞ্চলের সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সমস্যা মনে করলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় এক জরুরি প্রস্তুতিমূলক সভা করে গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে উপকূলে ফিরিয়ে নিয়ে জন্য মৎস্য বিভাগ ও ট্রলার মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

(এসএস/এসপি/নভেম্বর ১৭, ২০২৩)