সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দেড় কেজি পাঙ্গাস মাছ দেড় হাজার টাকা দাম চেয়েছে শফিকুল নামে এক মাছ ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় বাজার জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টায় ঘটনাটি ঘটে পৌর শহরের গাছতলাঘাট মাছ বাজারে। 

স্থানীয়রা জানান, গরীবের প্রতিদিনের খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পাঙ্গাস মাছ। জাতীয় মাছ ইলিশ হলেও গরীব অসহায়দের জাতীয় মাছ পাঙ্গাস এমনটাই মজা করে গরীব অসহায়দের বলতে শুনা যায়। পাঙ্গাস মাছের দাম দেড় হাজার টাকা শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন ক্রেতারা।

স্থানীয়রা আরো জানান, সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার মাছ নদীতে ছাড়েন। জেলেরা এই মাছ ধরে বাজারে এত বেশি দামে বিক্রি করার বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা সাধারণ মানুষ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে আজ বড় অসহায়। এসময় ক্রেতারা দ্রব্য মূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

গাছতলাঘাট বাজারে মাছ কিনতে যান স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রউফ। এক মাছ ব্যবসায়ীর কাছে একটি পাঙ্গাস কিনতে দাম জানতে চাইলে তিনি ১ হাজার টাকা কেজি দাম বলেন। মাছটির ওজন দেড় কেজি। এ জন্য জেলে মাছটির দেড় হাজার টাকা দাম চান। এতে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। গত সপ্তাহে নাগা মরিচ কিনতে গিয়ে বিক্রেতার কাছে দাম জিজ্ঞাসা করিলে তিনি জানান আড়াই হাজার টাকা কেজি। আব্দুর রউফ আরো জানান, দীর্ঘদিন যাবত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র অনেক দাম বেশী দিয়ে কিনতে হচ্ছে। যা আমাদের আয়ের তুলনায় অনেক বেশী।

স্থানীয় ক্রেতা সীমা বেগম, শরীফ মিয়া ও সোহেল মিয়া বলেন, দৈব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বেশি দামে মাছ কিনে খেতে কষ্ট হয়। বাজারে ছোট চিংড়ি মাছের দাম চেয়েছে ১৫শ টাকা কেজি। সাতক্ষিরা বা বিদেশী চিংড়ি ৭শ থেকে ৮শ টাকা, দেশী রুই ৭শ থেকে ৮শ টাকা, সাতক্ষিরার রুই ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা, দেশী কাতল সাড়ে ৩শ থেকে ৬শ টাকা, সাতক্ষিরার বা বিদেশী কাতল সাড়ে ৩শ টাকা, পাবদা প্রকার ভেদে ৩শ থেকে ৫শ টাকা, কাপ জাতীয় মাছ ২শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা। দেশীয় সোল, টাকি, মলা, ঢেলা, পুটি, টেংরা, গোলসা, বাইম, চিকরা বাইম, রাণী মাছ, গোতম মাছ এগুলি বাজারে মিলছে না। এক বছর যাবৎ দেশীয় ছোট মাছ কিনে খেতে পারছি না। এসব দেশীয় অল্প মাছেই রান্না করা যায় অনেক সবজি। কিন্তু দামের কারণে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ছেলে- মেয়েদের মাছের নামও শেখানো যাচ্ছে না। এই মৌসুমে সবজির দামও কম থাকার কথা, কিন্তু সবজির দামও দিগুণ।

বাজার ঘুরে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি নদীর পাঙ্গাস ৬৭০ টাকা কেজি দরে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার এক মাছের আড়ৎ থেকে কিনে এনেছেন। গাছতলাঘাট এলাকায় ১৫শ টাকা দাম চেয়ে মাছটি ১২শ টাকায় বিক্রি করেছেন।

এদিকে মাছ ব্যবসায়ী কাদির মিয়া, শাহ আলম, স্বপন, কাউসার মিয়া বলেন, এ মৌসুমে বাজারে মাছ বেশি থাকার কথা, তবে এবার বাজারে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যাও পাওয়া যাচ্ছে তার দাম অনেক বেশী। জেলেরা জানান, আড়ৎ থেকে মাছ বেশী দামে কিনে এনে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, এত দামের পাঙ্গাস হলে কিনে খাওয়া ক্রেতাদের জন্য নাগালের বাইরে চলে যাবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের নজরধারী অব্যাহত রয়েছে। যেখানে প্রকার ভেদে পাঙ্গাস ১৪০ টাকা থেকে সাড়ে ৩শ টাকা সেখানে দেড় হাজার টাকার পাঙ্গাস না কিনলে দাম এমনিতে কমে যাবে, আমাদের ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে।

(এস্সএসপি/নভেম্বর ২২, ২০২৩)