চাঁদপুর প্রতিনিধি : কচুয়া উপজেলার পাথৈর ইউনিয়নের রায় বাহাদুর চন্দ্র সেন জমিদার বাড়ির পরিত্যক্ত ভবনে রাতের অন্ধকারে প্রতিমা স্থাপন ও বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা করছে দুস্কৃতিকারীরা। এ ঘটনায় পাথৈর ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বাদী হয়ে কচুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২নং পাথৈর ইউনিয়নের ভূমি অফিস সংলগ্ন প্রায় সাড়ে ৭ একর সরকারের ভিপি সম্পত্তিতে অবস্থিত জমিদার বাড়ির পরিত্যক্ত ৩টি ভবন রয়েছে। দীর্ঘদিন রায়বাহাদুর শরৎ চন্দ্র সেন চৌধুরীরের বাড়িটি পাথৈর ইউনিয়নের ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। জড়াজীর্ণ ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় পার্শ্ববর্তী ভবনে বর্তমানে ভূমি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৯ নভেম্বর রোববার রাতের অন্ধকারে কোনো এক সময় ওই ভবনে বিভিন্ন ধরনে প্রতিমা স্থাপন করে দুর্বৃত্তরা। একই সাথে ওই স্থানে পাশের পাথৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রাবাসের একটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২০ নভেম্বর সোমবার অফিসে এসে প্রতিমাগুলো দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়কে অবগত করি। বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইবনে আল জায়েদ হোসেন, সাচার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ কবির হোসেন, উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক, হি›উ-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তুষ পোদ্দার, সাচার জগন্নাথ ধাম মন্দিরের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু ও ইউপি সদস্য কাউছার আহমেদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতিমাগুলো অরক্ষিত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে সুরক্ষিত অবস্থায় পার্শ্ববর্তী সাচার দূর্গা মন্দিরে হস্তান্তর করেন।

পাথৈর গ্রামের অধিবাসী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, সোলেমান মিয়া ও আমিন মিয়া জানান, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন সরকারি সম্পত্তিতে ছাত্রাবাস ও পাঠাগারের সাইনবোর্ড দিয়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। পরিত্যক্ত ভবনে প্রতিমা স্থাপন করে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছে।

ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারের এই সম্পত্তি দখলের জন্যে স্থানীয় অধিবাসী বিষ্ণুপদ আচার্য দেবত্তোর সম্পত্তি দাবি করে ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইবুনালে ১২৮৩/১৮ একটি মামলা দায়ের করে। এছাড়া বায়না সূত্রে মালিকানা দাবী করে নুরুল ইসলাম ৭১/১৯৮৫ মামলা দায়ের করেন। মামলা দুটি বিজ্ঞ আদালতে চলমান রয়েছে।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুস্কৃতিকারীরা হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যকার সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

জমিদার বাড়িতে পাথৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও পাঠাগারের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছালেহা বেগম জানান, বিদ্যালয়ের নামে কে বা কারা সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছে আমার জানা নেই।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং ওই স্থান থেকে প্রতিমাগুলো সরিয়ে সাচার দুর্গা মন্দিরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ওই ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ ইমাম হোসেন বাদী হয়ে এ ঘটনায় কচুয়া থানায় একটি লিখিত ডায়েরি দায়ের করেন।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, পাথৈর ইউনিয়নে সরকারি সম্পত্তিতে প্রতিমা স্থাপন ও বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছে এমন একটি সাধারণ ডায়েরি হাতে পেয়েছি। বিষিয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ইউএইচ/এএস/নভেম্বর ২৩, ২০২৩)