নববিবাহিত স্ত্রীকে বাড়িতে আনা হলো না ভাটা শ্রমিক দেবহাটার আমিন সরদারের

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাত মাস আগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সেহারা গ্রামের আইনুল ইসলামের মেয়ে আঁখিকে বিয়ে করেন দেবহাটা উপজেলার নাংলা গ্রামের শাহজাহান সরদারের ছেলে আমীর হোসেন (২২)। আগামি বছর জানুয়ারিতে আঁখিকে বাড়িতে নিয়ে আসার কথা ছিলো আমিনের। তা আর হয়ে উঠল না। মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর উপজেলার গ্রামে একটি ইটভাটায় চিমনি তৈরির সময় পড়ে যেয়ে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যায় আমিন।
নিহত আমিনের চাচাত ভাই রাশেদুল সরদার জানান, গত ২১ নভেম্বর তিনিসহ আমিন, একই গ্রামের ইব্রাহীম হোসেন, সাঈদুল, মাসুমসহ ১০জনকে নিয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার একটি ভাটায় কাজ করতে নিয়ে যান দক্ষিণ নাংলা গ্রামের মৃত মাদার গাজীর ছেলে খায়রুল ইসলাম। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ওই ভাটার চিমনি তৈরির সময় উঁচু স্থান থেকে পড়ে যায় আমিন। মারাত্মক জখম অবস্থায় জননী হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে ময়না তদন্ত ছাড়াই তার লাশ রাত ১০টার সময় নাংলা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পুলিশকে অবহিত না করেই বুধবার সকাল ১০টায় বাড়ির পাশে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
নিহত আমিনের মা মোমেনা খাতুন জানান, তার স্বামী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে তার। ঘর দরজা না থাকায় সাত মাস আগে বিয়ে দিয়েও আমিনের স্ত্রী (পুত্রবধু) আাঁখিকে ঘরে তুলতে পারেননি। ঘর দরজা বানিয়ে আগামি জানুয়ারিতে বউমাকে ঘরে তোলার কথা ছিলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমিন সরদারের সঙ্গে ওই ভাটায় কাজ করতে যাওয়া কয়েকজন শ্রমিক বলেন, যারা ভাটার চিমনি তৈরির কাজ করা অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হন তাদেরকে অনেক সময় ভাটার চুল্লীতে ফেলে মেরে ফেলা হয়। আমিনের সেই পরিস্থিতি না হলেও সে পড়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে যেতে গড়িমসি করা হয়। তাদের সরদার নাংলা গ্রামের মাদার গাজীর ছেলে খায়রুলকে জানানোর পরও তিনি ভাটা মালিকের সাথে কোন কথা বলেন নি। এমনকি আমিনের লাশ গায়েব করার চেষ্টা করা হয়। শুধু তাদের প্রবল আপত্তির কারণে খায়রুল ও ভাটা মালিক ময়না তদন্ত না করিয়ে কবরস্ত করার শর্তে লাশ ফেরৎ দেয়। একপর্যায়ে এ নিয়ে যাতে কোন পত্রপত্রিকায় ছাপা না হয় সেজন্য টাকা দিয়ে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
এ ব্যাপারে ভাটা সরদার নাংলা গ্রামের খায়রুল ইসলাম জানান, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর উপজেলার খোকনের ভাটায় চিমনি তৈরির সময় পড়ে যেয়ে মারা যায় আমিন। ভাটা মালিক তার (খায়রুল) মাধ্যমে ওই পরিবারের আর্থিক সহযোগিতা করবে তাই পুলিশকে না জানিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে। জানানো হয়নি স্থানীয় দেবহাটা থানায়।
নওয়াপাড়া ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, ভাটা সরদার খায়রুল নিহত আমিনের কর্মস্থলের (ইটভাটা) ঠিকানা গোপন রেখে মালিকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে না দেওয়ার পায়তারা করতে পারে। তিনি বিষয়টি জানতে পারলে সাংবাদিকেদের জানাবেন।
(আরকে/নভেম্বর ২৯, ২০২৩)