গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : বিএনপি কিভাবে নির্বাচন করবে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি'র নেতা কে? তাদের কোন নেতা নেই। বিএনপি চিন্তা করেছিল নির্বাচন হবে না। এখন নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। এক সময় বলেছিল নির্বাচন হতে দেবে না। উস্কানি আছে যে, নির্বাচন ঠেকাও। নির্বাচনের সিডিউল হয়ে গেছে। এখন তারা মনে করছে নির্বাচন হয়েই যাবে। তাই তারা মার্চ মাসের দিকে দেশের এমন অবস্থা করবে, দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা। এটা শুধু দেশের নয়, বাইরের দেশেরও পরিকল্পনা আছে। যেভাবেই হোক দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে।  

গোপালগঞ্জ সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ শুক্রবার সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় কালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নির্বাচনে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যারা আগুন দিতে যাবে, তাদেরকে ধরে পুলিশের সোপর্দ করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকায় সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যদি আগুন সন্ত্রাসী বেশি হয়, তাহলে তাদের প্রতিহত করে, আগুনেই ফেলে দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন দেখতে পারছি আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো। পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মা এদের উপর ভর করেছে। পুলিশকে যেভাবে মাটিতে ফেলে পেটালো, এরচেয়ে জঘন্য কাজ মনে হয় আর হতে পারে না। পুলিশ-একটা গরীব মানুষের ছেলে, একটা চাকরী করে। তাকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা, সে যখন বেহুশ হয়ে গেছে মৃতপ্রায়, তার মাথা থেকে হেলমেট ফেলে দিয়ে মাথায় কোপালো, মারলো। কোন দেশে আমরা বাস করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা বিএনপি’র নেতা। কি বিভৎস এরা। এভাবে একটা পুলিশ পিটিয়ে মারলো। অ্যাম্বুলেন্সে পুলিশ ঢুকার পর সেখানে আগুন দিলো। ২/৩ টা অ্যাম্বুলেন্স পোড়ালো। সাধারন রুগী নিয়ে যাচ্ছে সেই অ্যাম্বুলেন্সের উপর তারা আক্রামন করে। রুগীসহ অ্যাম্বুলেন্সের উপর আক্রমন করে বিএনপি। এই হলো তাদের চরিত্র। তাদের উপর মানুষের আস্থা বিশ্বাস থাকবে কি করে। এখন আন্দোলনের নামে পোড়াও জ্বালাও। এদের শিক্ষাটা বোধদয় ওই ইসরাইলের কাছ থেকে নেয়া। যারা প্যালেটাইনের উপর আক্রমণ করছে। হাসপাতালে লাশের স্রোত বয়ে যাচ্ছো গাজায়। এরা মনে হয় ওইখান থেকে শিক্ষা নিয়ে চলে।

বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আবার তারা আউটসোসিং আন্দোলন করে। সমাজের কিছু অবাধ্য লোকজনের হাতে টাকা দিয়ে আগুন দেয়ায়। যুকদলের নেতা নিজে সরাসরি আগুন দিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। জনগন কিন্তু সচেতন। তাদের ধরে ধরে পুলিশে দিয়ে দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, আপনারা জানেন, ২০০৭ সালে আর জীবনে রাজনীতি করবো না তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়। সেখানে বসে দেশের মানুষকে হুকুম দিয়ে মানুষ হত্যা করাচ্ছে। জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে, তখন সেনাবাহিনীর অফিসার, সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিলেন। খালেদা জিয়া ক্ষতায় এসে সেই একই ভাবে এদেশে হত্যাকান্ডের রাজনীতি শুরু করে। পুরোটাই একটা খুনি পরিবার। প্রথম দিকে বিএনপি’র আন্দোলন করায় কিছু মানুষের সমর্থন পেয়েছিলো। কিন্তু সহিংস আন্দোলন করায় মানুষ এখন আর তাদের সাথে নেই।

মত বিনিময় সভায় পুরোনা স্মৃতি রোমন্থন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে দেশ ছেড়ে যাওয়ার একেবারেই ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু, তখন কেন যেন যেতে হলো। তারপর ফিরে আসলাম। ফিরে আসাটা কষ্টদায়ক ছিলো।কারণ যেদিন এয়ারপোর্ট ছেড়ে যাই কামাল, জামাল সহ প্রায় সকলেই ছিলো। সেই ‘৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এলাম। কিন্তু অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, কাউকে পায়নি। বেঁচে গিয়েছিলাম।এটা হয়তো আল্লাহ-র ইচ্ছা ছিলো। ছিলো বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ। সেদিনও ঝড় বৃষ্টি ছিলো। সেদিন ঘোষণা দিয়েছিলাম বাংলাদেশের মানুষই আমার আপনজন, তারাই আমার আত্মীয়। আমি মা-বাবা হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসার ছোঁয়া পেয়েছি। আসার পর থেকে আমার চলার পথ খুব মসৃণ ছিলো না। যে ঘাতকরা আমার বাবা-মাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো তাদের বিচার হবে না। তাদের বিচার থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে। তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে বিভিন্ন দুতাবাসে চাকরী দিয়ে।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭১ সালে যারা এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, লুটপাঠ করেছে, নারীদের উপর পাশবিক নির‌্যাতন চালিয়েছে, অত্যাচার চালিয়েছে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশটাকে আমার বাবা ছাড়া জীবন কষ্ট করে স্বাধীন করে দিয়ে গেলেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। সেই মানুষগুলো জন্য তো কিছু করতে হবে। কারণ জাতির পিতা ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে বিজয় তুলে এনেছেন। সেই বিজয় ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছে। কোন এক মেজর ঘোষণা দিলো আর না কি দেশ স্বাধীন হয়ে গেলো। জয়বাংলা শ্লোগান নিষিদ্ধ করা হলো, ৭ মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ করা হলো। এমন কি বাংলাদেশের নামটাও পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়েছিলো।পাকিস্তানের একটি প্রদেশের মতো বাংলাদেশকে পারিচালনা করার পরিকল্পনা ছিলো।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, বার বার আমি মৃত্যুকে সামনে দেখিছি ।এই কোটালীপাড়াতেও বিশাল বিশাল বোম মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিলো। মিটিং এ আক্রমণ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা এগুলোতে প্রতিনিয়ত। সরাসরি গুলি এই অবস্থার মধ্যদিয়েও আল্লাহ বারবার আমাকে বাঁচিয়ে রাখলেন।

এরই মধ্য দিয়ে আমরা ‘৯৬ সালে সরকার গঠন করি। আবার ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। ২০০৯ থেকে আমরা এ পর‌্যন্ত একটানা সরকারে আছি।অন্তত আজ এইটুকু বলতে পারি বাংলাদেশটা বদলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হয়েছে এখন আর খাদ্যের হাহাকারটা নেই। খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছি। শিক্ষার সুযোগ আমরা সৃষ্টি করেছি। ঠিক যা জাতির পিতা চেয়েছিলেন। একটানা সরকারে থাকতে না পারলে আমাদের উন্নয়ন দৃশ্যমান হতো না। আমরাই তো শ্লোগান তুলেছিলাম আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেবো। আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেছি। আর সেই আন্দোলন সফল করতে সরকারে এসে একটানা সরকারে থেকে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রায় ঘন্টাব্যাপী বক্তব্যে তিনি বিগত ১৫ বছরের তার ক্ষমতায় থাকাকালীন উন্নয়র নিয়েই কথা বলেন।

কোটালীপাড়ার ভোটারদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে সারা দেশ নিয়ে চিন্তা করতে হয়, ভাবতে হয়। আমার নির্বাচনী কাজ আপনারাই করে দেন। যে কারনে আমি সারা দেশের মানুষের কথা ভাবতে পারি, কাজ করতে পারি। যার সুফল সারা দেশের মানুষ পায়।

শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কোটালীপাড়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে সেখানে থেকে ফিরে যান টুঙ্গিপাড়ায়।

এ সভায় আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা ধরণের দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ।

এ সময় শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সারহান নাসেন তন্ময়সহ কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩)