গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম. মাহবুবের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা চত্বরের জয়বাংলা পুকুর পাড়ে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

সকাল ১০টায় বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, আবাসিক হল প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স এসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ শহীদ বুািদ্ধজীবী দিবসের শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এ সময় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব, প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুল আলম, ট্রেজারার বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. মোবারক হোসেন, রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান, প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দারসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম. মাহবুবের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ৫০১ নং কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব বলেন, আমরা শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে যে মানুষগুলো স্বাধীনতার পথে অগ্রগামী ছিলেন, পথপ্রদর্শক ছিলেন, তাদের স্মরণ করি। কারণ পৃথিবীর ইতিহাসে যাদের কথায়, বুদ্ধিতে, পথচালনায় উন্নতি এবং শোষণমুক্তি ঘটেছে; তারা জাতির সূর্যসন্তান। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা জানি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের সংবিধানকে নানাভাবে বিকৃত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমরা ভুলতে বসেছি। আজকে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তাকে দেখানোর জন্য হলেও কত কিছু করতাম। কিন্তু আমাদের জানতে হবে, জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু আরো শক্তিশালী। তাই তার আদর্শ, দর্শন মেনে এই বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশকে ভালোবেসে আমরা সৎভাবে কাজ করে যাবো। মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুর দর্শন যখন এই দেশে থাকে না, তখনই আমরা পরাধীন হয়ে পড়ি।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বহমান, এই উন্নয়নকে থামতে দেয়া যাবে না। তাই আগামী নির্বাচনে অপশক্তিকে রুখে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে।

সভায় বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় মূলত ১৯৪৭ সাল থেকে। সেই সময় থেকেই আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীন বাংলাদেশের দাবি জানিয়েছেন। পাকিস্তানিরা যখন দেখেছে, বাঙালিরা প্রতিবাদ করতে শিখছে, তারা অধিকারের কথা বলছে, তখন পূর্ব পাকিস্তান যাতে দূরদর্শী চিন্তা করতে না পারে, তার জন্য তারা সব রকম চেষ্টা চালিয়েছে। এমন সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আমদের সত্যিকারের সোনার বাংলা দিতে চেয়েছেন। কিন্তু কুলাঙ্গাররা দেশের বুদ্ধিজীবী এবং তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ার পথে বাধা দিয়েছে। আজকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানেও ষড়যন্ত্রের মুখে পড়তে হয়েছে। আমাদের একত্রিত হয়ে সব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হবে।

এ সময় ট্রেজারার বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. মোবারক হোসেন সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা আমাদের দেশকে মেধাশূন্য করার সব রকম চেষ্টা চালিয়েছে। আর আমাদের স্বাধীন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আমাদের এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি ড. আরিফুজ্জামান রাজিবের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য দেন প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দার, বিজয় দিবস হলের প্রভোস্ট ড. মো. রবিউল ইসলাম প্রমুখ।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহিদ বুদ্ধিজীবীগণসহ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে রণাঙ্গনের মাঠে আত্মদানকৃত সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিকেলে কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩)