মোঃ শাজনুস শরীফ, বরগুনা : ১৪ বছর আগে ভালবাসার সম্পর্ক হয় গৌরনদী শহরের আল মাহমুদ ফয়সাল ও বরগুনার মেয়ে বিথির (ছদ্মনাম) সাথে, দুজনই লেখা পড়া করতেন বরিশাল রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনিস্টিউটে। ২০০৯ সালে নিজেদের শিক্ষালয়ে পরিচয় হয় ফয়সাল এবং বিথির (ছদ্মনাম), বন্ধুত্বের সম্পর্কের ৬ মাস হতে না হতে ভালবাসার সম্পর্কে রূপ নেয় ফয়সাল বিথির সম্পর্ক। ২০১৩ সালে ডিপ্লোমা শেষ করেন একই সাথে। তারপর বিএসসি গ্রাজুয়েশন নিতে ২০১৫ সালে একই সাথে ভর্তি হয় ঢাকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আই-ইউ-বি-এটি তে যার ব্যাচ নম্বর ১৫২০। ফয়সাল লেখাপড়া করতো সিভিল ইন্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে এদিকে বিথির বিষয় ছিলো কম্পিউটার সাইন্স এবং ইন্জিনিয়ারিং।

২০২০ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হওয়ার আগে ই দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০১৯ সালে বিয়ে করেন ফয়সাল এবং বিথি। ভালবাসার প্রথম দিকে মেয়ে পক্ষের মা বাবা রাজি না থাকার কারনে এবং ভালবাসার সম্পর্ককে স্থায়ী সম্পর্কে রুপান্তর করার জন্য একটু তড়িঘড়ি করেই বিয়ে টা করে নেন বিথি এবং ফয়সাল। দুই পরিবার থেকেই মেনে নিয়েছিলেন তাদের বিয়ের সম্পর্ক। লেখাপড়া চলাকালীন সময়ে আচার অনুষ্ঠান করে বিথিকে তার স্বামীর ঠিকানায় উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মেয়ের মা বাবা কিন্তু বিপত্তি জানায় ফয়সাল এবং ফয়সাল এর পরিবার, ফয়সাল এর পরিবার বিথির পরিবার কে জানান এখন যখন লেখাপড়া করছে লেখাপড়া শেষ করুক তারপর উঠিয়ে আনবো আপনাদের মেয়েকে।

২০২০ সালে দুজনার আই-ইউ-বি-এটি থেকে বিএসসি শেষ হওয়ার পর আবারো মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতে উঠিয়ে দিতে চান বিথির মা বাবা কিন্তু তখন ও বিপত্তি প্রকাশ করে ফয়সাল এর পরিবার বলেন ছেলে সবে মাত্র লেখাপড়া শেষ করলো একটা চাকরি হোক তারপর ঝাঁক ঝমক করে অনুষ্ঠান করে আমাদের পুত্রবধূকে কে উঠিয়ে আনবো।এমনটাই সাংবাদিকদের জানান বিথির বাবা বজলুর রহমান। তারপর চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকেন দুজনেই। অনেক চেষ্টার পর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে নেছারাবাদ পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগ দান করেন মোঃমাহমুদ আল ফয়সাল। চাকরিতে যোগদান করার পর বিয়ের অনুষ্ঠান এর তারিখ নির্ধারণ করেন ফয়সাল ও বিথির পরিবার,২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর ভালো দিন হিসেবে বিবেচনা করে দুই পক্ষই। বিয়ের আয়োজন এর জন্য প্রস্তুত কনে পক্ষ।বাবা মায়ের প্রথম আদরের সন্তানের বিয়ে, বড়ো করেই করতে চান বিথির পরিবার।কমিউনিটি সেন্টার থেকে শুরু করে আত্নীয় স্বজন দাওয়াত দেওয়াসহ বিয়ের সকল কেনা কাটা করেন ফেলেন বিথির মা বাবা।

দুই ফ্যামিলির সাথে ই যোগাযোগ হচ্ছিলো দুই ফ্যামিলির।ফয়সাল চাকরিতে জয়েন করার পর প্রায় ই আসতেন শ্বশুর এর বাসায় এমনটাই বলেন বিথি ও বিথির পরিবার।বিপত্তি শুরু হয় ০৫ নভেম্বর ২০২৩ সকাল বেলা, স্বাভাবিক দিন এর মত ফয়সাল তার শ্বশুর বাড়ি থেকে সকাল বেলা কর্মস্থল এ চলে যান।বিথি বিছানা ঠিক করতে গিয়ে একটা হলুদ খাম দেখতে পায় ফয়সালের বালিশের নিচে।খামটি খুলে পড়ার পরে নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছে না বিথি এটা কি ভাবে সম্ভব?তার স্বামী ফয়সাল তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। বিশ্বাস আর ভালবাসার বেড়াজালে আবদ্ধ বিথি কোন ভাবে ই মানতে রাজি না তার স্বামী ফয়সাল তাকে ডিভোর্স দিয়েছে।বিথি তার মায়ের ফোন থেকে ফয়সালকে কল দিতে থাকে কিন্তু ২ বার ফয়সাল এর ফোনে কল ডুকলে ও রিসিভ করে নি ফয়সাল তৃতীয় বার চেষ্টা করে আবার ও কল দিলেন বিথি অপরপক্ষ থেকে বলা হলো আপনার কাঙ্খিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তারপর ই অজ্ঞান হয়ে যায় বিথি এমটাই বলেন বিথির মা।

এই ব্যাপারে বিথির কাছে জানতে চাইলে বিথি সাংবাদিকদের কে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন আমি জানি না কি আমার অপরাধ ফয়সাল যেই সময় আমার কাছে যা চাইতো ও যেই ভাবে চলতে বলতো আমি সব সময় সেই রকম চলতাম।আমি ওর জন্য অনেক কিছু করেছি একটা মানুষ কতটা ভালবাসতে পারে আমি জানি না কিন্তু আমার সর্বস্ব দিয়ে আমি ওরে ভালবেসেছি।আমি এবং আমার পরিবার ফয়সালের জন্য এমন কিছু নাই যেটা করি নাই।আমরা দুজন যখন ঢাকাতে ভর্তি হই তখন ওর ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফি সহ ওর যাবতীয় খরচ আমি বহন করেছি।আমার মা বাবা সরকারি কর্মকর্তা আমি তাদের বড় মেয়ে আমার মা বাবা কখনো আমার কোন আবদার অপূর্ণ রাখেনি।আমি যখন ভার্সিটিতে পড়ি প্রতিমাসে আমার বাবা আমার খাওয়া দাওয়া ও পকেট খরচ বাবদ আমাকে ৮ হাজার টাকা পাঠাতেন কিন্তু তারপর ও আমি টিউশনি করে টাকা ইনকাম করতাম এবং আমার টিউশনির টাকা দিয়ে ফয়সাল সেমিস্টার ফি দিতো।ওর জামা কাপড় থেকে শুরু করে ওর পকেট খরচটা আমি বহন করতাম।আপনাদের কি ভাবে প্রমান করবো আমি জানি না বা আমার জানা নেই আমি নিজে কষ্ট করে চলতাম কিন্তু ফয়সাল কে কখনো কষ্ট দেইনি সব সময় চিন্তা করতাম আমার কাছ থেকে যেনো ও বিন্দু মাত্র কষ্ট না পায় এটাইতো সত্যিকারের ভালবাসা বলে আমি মনে করি।

কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, রহমতপুর,বরিশালে যখন পড়াশোনা করেছে তখন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজের কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিতো।ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর তাকে ল্যাপটপ, ফোন কিনে দেই। ভার্সিটি শেষ হওয়ার পর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে আমি বরগুনা থেকে ফয়সালকে আবেদন করাই এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে চাকরির জন্য তাকে নেএকোনা উন্মীলন কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাই এবং সেখানেও তার কোচিং ফি,বাসা ভাড়া,খাওয়া দাওয়া সহ তার যাবতীয় খরচ আমি ও আমার ফ্যামিলি বহন করি। বইখাতা কলম সবকিছু আমি কিনে দেই। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে প্রিলি এবং রিটেন পাস করার পর আমাকে বলে ৪ লাখ টাকা ভাইভার জন্য না দিলে চাকরি হবে না।পরে আমি আমার বাবার বাসা থেকে চাকরির জন্য ৪ লাখ টাকা এনে দেই। আমার বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ২৭ ডিসেম্বর আর আজকে আমি কি রকম বেঁচে আছি আল্লাহ আমাকে কি ভাবে বাচিয়ে রাখছে তা আল্লাহ ই ভাল জানেন। কখন দিন হয় আর কখন রাত হয় তা ই বলতে পারি না। ফয়সাল আমার সাথে কেনো এরকম করলো আমি এখনো জানি না। বিয়ে হওয়ার পরে আমি অনেক বার ওদের বাড়ি যেতে চেয়েছি কিন্তু আমাকে কখনো ওদের বাড়ি নিয়ে যায় নি। ফয়সাল আর আমার মধ্যে প্রায় ই ঝগড়া হতো আমাকে কেনো ওর বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় না। আমি তো ফয়সাল এর কাছে কখনো কিছু চাইনি শুধু ওকে চেয়েছিলাম।আমার তো ফয়সালের অর্থ-বিত্তের প্রয়োজন ছিলো না আমি নিজে ও একজন কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার।আমি সুখে শান্তিতে ওর সাথে সংসার করতে চেয়েছিলাম।আসলে আপনাদের কাউকেই আমার কষ্ট টা বুঝাতে পারবো না বিয়ের দিন ঠিক করা হলো, ফয়সালের বাবা আমার বাবা কথা বলে ২৭ ডিসেম্বর আমাকে উঠিয়ে নিবে বলে সব কিছু ঠিক করলো কমিউনিটি সেন্টার থেকে শুরু করে আত্নীয় স্বজনদের দাওয়াত, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন বিথি।আমার বাবা খুব ভাল মানুষ নিজের কথা চিন্তা করবো কি পরিবারের কথা চিন্তা করেই নির্ঘুম রাত কাটে আমার। বিথি সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে বলেন ভাইয়া আপনারা আমার ভার্সিটিতে আমার বন্ধু বান্ধব এর কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন আমি কেমন মেয়ে। আমি কোন দিন ফয়সাল ব্যাতিত অন্য কাউকে চিন্তা করিনি কারণ ফয়সাল ছিলো আমার প্রথম ভালবাসা।১৪ বছর এক সাথে থেকেছি মা বাবার কিছুটা অবাধ্য হয়েই বিয়ে করেছিলাম ফয়সালকে বিয়ের পর মেনে ও নিয়েছিলো আমার বাবা। আজ আমার পাশে আমার মা বাবা ই আছে আর যার জন্য এতকিছু করলাম সে ই নাই।তবে শেষ পর্যন্ত আমার এটা ই মনে হয় ও আমার সাথে প্রতারনা করেছে। কারণ এই ঝামেলার পরে আমি জানতে পারি ওর আরো ২ ভাই এই ভাবে প্রেম ও বিয়ের অভিনয় করে অনেক গুলো বিয়ে করেছিলো। আপনারা একটু বের করেন আপনারা তো সাংবাদিক আপনারা সব পারেন। আমার বাবা মাকে ও কষ্ট দিয়েছে বিথি এমনটা বলেই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। মানসিকভাবে অনেকটা অসুস্থ বিথি এই ঘটনার পর থেকেই জানালেন বিথির মা বাবা।

বিথির বাবা জানান আমাদের মেয়ের সাথে হওয়া সকল অন্যায় এর বিচার চাই আরো জানা যায় এই ঘটনার পরে বিথির সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছে বিথি মামলা নম্বর ৫৭৩/২০২৩, মামলায় উল্লেখ করা হয় ফয়সাল বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করে। স্ত্রীর পরিবার কমবেশি ফয়সালকে টাকা-পয়সা দিতেন। ইতিমধ্যে ফয়সাল পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরে। ফয়সাল এ বছর ১৫ অক্টোবর তার স্ত্রীকে রেজিস্ট্রি তালাক দিয়ে সেই তালাক গোপন রেখে ১৯ অক্টোবর হতে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বরগুনাস্থ শ্বশুরের বাসায় তার স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা করে। ৫ নভেম্বর সকালে ফয়সাল তার শ্বশুরের বাসা থেকে তাদের বাড়ি যাওয়ার সময় শ্বশুরের বাসায় যেখানে ফয়সাল ঘুমাতেন সেখানের বালিশের নিচে একটি খামে তালাকের নোটিশ গোপনে রেখে যায়।মামলার এই বিষয় ফয়সাল এর সাথে যোগাযোগ করলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। বর্তমানে মামলাটি বরগুনা থানায় তদন্তাধীন আছে।

(এসএস/এএস/ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩)