স্পোর্টস ডেস্ক : ১০ নভেম্বর জাতীয় জীবনে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন না হলেও ক্রীড়াঙ্গনের জন্য দিনটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ক্রিকেটের জন্য। ২০১০ সালের ২৬ জুন টেস্ট পরিবারের সর্বশেষ সদস্য হওয়ার পর দ্রুততম কম সময়ের মাঝে বাংলাদেশ তাদের অভিষেক টেস্ট খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে। যা শুরু হয়েছিল এই ১০ নভেম্বর। অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ নয় উইকেটে হারলেও শুরুর সঙ্গে এর কোনো মিল পাওয়া যাবে  না। চারদিনে শেষ হওয়া টেস্টের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া।

অভিষেক ইনিংসেই চারশ রান করা, আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৪৫ রানের ইনিংস, নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের ছয় উইকেট ছিল বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতায় যোগ। কিন্তু শুরুর এই চমক পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ দল আর ধরে রাখতে পারেনি। ১৪ বছরে বাংলাদেশের টেস্ট খেলেছে ৮৭টি। যেখানে জয় মাত্র ছয়টিতে। ড্রয়ের খাতায় রয়েছে ১১টি। হারের বৃত্তে জড়িয়ে আছে ৭০টি ম্যাচ। সংক্ষিপ্ত এ পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার পাল্লাটিই অনেক ভারী। সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দলের অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মুশফিকুর রহীম অকপটে স্বীকারও করেছেন সে কথা। তিনি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ১৪ বছর পূর্ণ হলেও খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই দল। ব্যার্থতার পাল্লাটাই ভারী আমাদের। ব্যর্থতার কারণে আমরা অনেক টেস্ট জয় মিস করেছি। একটু চেষ্টা থাকলে বেশ কিছু টেস্ট আমরা ড্র করতে পারতাম। দল হিসেবে আরও ভালো করতে পারতাম।’
চট্টগ্রামের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন মুশফিক। আপাতত জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে নিজেদের অবস্থানের আরও উন্নতি ঘটাতে চান তিনি। মুশফিকুর রহীম বলেন, ‘টানা ম্যাচ জয়ের ফলে আমরা পরের বছরগুলোতে বাড়তি কিছু টেস্ট খেলার সুযোগ পেতে পারি।’ টেস্টে ভালো করতে হলে বেশি বেশি ম্যাচ খেলার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ সফরে এসে কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারও তাই বলেছিলেন বলে স্মরণ করিয়ে দেন মুশফিক। তিনি বলেন, বেশি বেশি খেলার সুযোগ না পেলে উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে কম টেস্ট খেললেও ম্যাচ জয়ের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান মুশফিক।
প্রথম দুই টেস্ট জয়ের ফলে মুশফিকুর রহীমদের সামনে হোয়াইটওয়াশের হাতছানি। তিনি বলেন, ‘৩-০ ব্যাবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে আইসিসির নতুন নিয়মে র্যাঙ্কিং নয় নম্বরে থাকাটাই এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। অন্তত পাঁচ দিন যেন আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে পারি।’ খুলনার ম্যাচে নিজের ব্যাটিং ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে এসে তৃতীয় টেস্টে চট্টগ্রামের মাঠেই দল জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চান স্বাগতিক দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। দ্বিতীয় টেস্টের ব্যাটিং ব্যর্থতা পিছনে ফেলতে তাই কঠোর পরিশ্রম করছেন তিনি। রবিবার বিকালে দলের চার সদস্যকে নিয়ে তিনি কঠোর অনুশীলন করেন। সোমবার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই পুরো টিম নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন অনুশীলনের জন্য। শুধু ব্যাটিং বা কিপিং নয়, বোলিং অনুশীলনও করতে দেখা গেছে মুশফিককে। টানা প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অনুশীলন করে গোটা দল। খুলনায় ১৬২ রানের বিরাট জয়ে মুশফিকের দুই ইনিংস মিলে রান ছিল মাত্র ১১। রানআউট হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে প্রথম ইনিংসে ১১ রান করতে ৪৫ মিনিট ক্রিজে ছিলেন এ অধিনায়ক। দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট হন মুশফিক। এর আগে ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন মুশফিক। আর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলের জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন।
ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আশাতীত ভালো করার ফলে দলের মাঝে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। এই আত্মবিশ্বাসের জোরে মুশফিকুর রহীমরা এখন দেশের বাইরেও ভালো করতে চান। তিনি বলেন, ‘শুধু দেশের মাঠেই নয়, বিদেশের মাঠিতেও আমরা চ্যালেঞ্জিং পারফর্ম করতে চাই। গত কয়েক বছরে দলে এখন অনেক পারফরমার উঠে এসেছে, যা দলের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।’

(ওএস/এইচআর/নভেম্বর ১১, ২০১৪)