চৌধুরী আবদুল হান্নান


সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক জনগণ, সরকার নয়। সরকার পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী-উপদেষ্টাগণ। মাত্র ৪০ জনের মতো ব্যক্তির হাতে ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ভর করছে, ভালো থাকবে কি মন্দ।

মন্ত্রিসভার সদস্যদের কতটা উন্নত মানসিকতা ও যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে, তা ব্যাখ্যা করার দরকার হয় না। নতুন এ ছোট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পর্যবেক্ষণের ফল। মেধাবী, উদ্যোগী, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ ঘটিয়েছেন তিনি, এবার শুরু শুভযাত্রা।

দুর্নীতিসহ নানা কারণে বিদায়ী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন ৩০ জন সদস্য; প্রধানমন্ত্রী তাঁর সহকারীদের কতটা নজরদারিতে রাখেন তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয় না। মন্ত্রিসভায় পুরানদের বিদায় আর নতুনদের আগমন প্রক্রিয়ায় তাঁর বিচক্ষনতা স্পষ্ট। মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে একটি সতর্কবার্তা ইতোমধ্যে পৌঁছেছে যে, তাদের কার্যকলাপের প্রতি সংসদ নেতার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে; দুর্নীতি-অনিয়ম করলে কারও ছাড় নেই, কোনো এক সময় মূল্য তাকে দিতেই হবে।

বাদ পড়া একজন মন্ত্রী ১৯৭১ সালে যার বয়স ছিল ৯ বছর, তিনি এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ম্যানেজ করেছিলেন, এ নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল অনেক। অনৈতিক কর্মকান্ড দিয়ে যিনি জীবন শুরু করেছিলেন, মন্ত্রিপরিষদে তার অন্তর্ভূক্তি জাতির জন্য কেবল দুর্ভাগ্যই নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম উপহাস।

অন্যান্য যারা বাদ পড়েছেন, তাদের বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তৃতা, বিবৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, নিজ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত নয়, এমন বিষয়েও রয়েছে অতিকথন আর প্রধানমন্ত্রীকে অপ্রাসঙ্গিক তোষামোদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, কেবল চাটুকারিতা আর আনুগত্য দিয়ে পদ ধরে রাখা যায় না, কাজে প্রমান করতে হয়। তারা বুঝতেই পারেননি যে ইতোমধ্যে তারা নেতার আস্থা হারিয়েছেন।

পারিষদবর্গের তোষামোদ আর চাটুকারিতার একবার মোক্ষম জবাব দিয়েছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত দেশের ত্রাণকর্তা মহামতি লেনিন। চাটুকারদের তৈলমর্দন শেষে লেনিন বলেছিলেন. “আমি নিজের রসে সিক্ত হতে প্রস্তুত নই।”

যারা দূরদর্শী নেতা, বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক তারা সহজে মানুষ চিনতে পারেন। সদা শত তোষামোদকারী আর সুযোগ সন্ধানী দ্বারা পরিবেষ্টিত থেকেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন না, তা আবার প্রমান করলেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ তো আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, দেশের একমাত্র দুর্নীতিমুক্ত বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কৃষক শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সারা বছর ফসল উৎপাদন করে চলেছে, লক্ষ লক্ষ পোষাক শ্রমিক রপ্তানি খাতকে চাঙা করে রেখেছে, প্রবাসী বাঙালির প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রায় পূর্ণ হচ্ছে সরকারের অর্থভান্ডার। এখন দরকার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা।

অর্থনীতির বর্তমান বেহাল দশা থেকে উত্তরণ একটি কঠিন কাজ; একজন যোগ্য ব্যক্তি আবুল হাসান মাহমুদ আলী দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক, কূটনীতিক এবং অর্থ শাস্ত্রের ছাত্র-শিক্ষক। পরিপক্ক বুদ্ধিমত্তা আর জোর মনোবল দিয়ে কীভাবে তিনি কাজ শুরু করেন, দেখার অপেক্ষা আমাদের।

ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্টচক্র, বাধা দেওয়ার যেন কেউ নেই।

প্রথমেই যদি ব্যাংক ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকটিকে মেরুদন্ড শক্ত করার উদ্যোগ নেন, আমরা আশান্বিত হব এই ভেবে যে, পত্তনেই চেনা যায়। মনে হবে নতুন অর্থমন্ত্রী ঠিকই অন্ধকার দূর করে আলো জ্বালাবেন।

লন্ডন ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চে (সিইবিআর) এর একটি গবেষণালব্ধ পূর্বাভাসের হিসাব মতে ২০৩৫ সালেই বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।

নতুন সরকার হোক বাঁক বদলের সরকার, এ সরকারের কর্মকান্ড আমাদের কাঙ্খিত উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। হাল ধরেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।