সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : শীত যেন কমছেই না। দিন যত যাচ্ছে শীতের তীব্রতা ততই বাড়ছে। শীত থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন পেশার মানুষ ছুটছেন শীতবস্ত্রের দোকানে। ভৈরবে জমে উঠেছে শীতের কাপড় বেচাকেনা। বিভিন্ন দোকানেও ফুটপাতে রয়েছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কয়েক দিনের টানা তীব্র শীতে ক্রেতারা গরম কাপড় কিনতে ভৈরব শহরের রাত্রিকালীন পাইকারি কাপড়ের বাজারসহ সকল শীত বস্ত্রের দোকানে ভীড় করতে দেখা গেছে। ক্রেতারা পছন্দমত বাহারি রংয়ের শীতের কাপড় কিনছেন। 

১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ও ১৭ জানুয়ারি বুধবার সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, নৈশ্যকালীন কাপড়ের পাইকারি বাজার নদীরপাড়, ছবিঘর সিনেমা রোড, ফায়ার সাভিস রোড ও জামে মসজিদ রোড এলাকায় শত শত কাপড় বিক্রেতা বাহারি রংয়ের শীতের কাপড় সাজিয়ে দোকান নিয়ে বসেছেন। এসব দোকানে রয়েছে জ্যাকেট, সুয়েটার, হুডি, লেদার, চাঁদর, মাফলার, টুপি, মোজা, কম্বলসহ বিভিন্ন রং বেরংয়ের শীতের কাপড়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ক্রেতারা বাজারে ঘুরে ঘুরে পছন্দের শীতের কাপড় কিনছেন। এদিকে সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন শপিংমলসহ বিভিন্ন দোকানে ক্রেতারা ভিড় করতে দেখা গেছে।

রাত্রিকালিন পাইকারী বাজার ও জামে মসজিদ রোডসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার এলাকায় ঢাকা, সাভার, নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়া, নরসিংদীর শেখেরচর ও মাধবদিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছোট বড় অসংখ্যক কাপড় তৈরির কারখানায় তৈরির কাপড় ব্যবসায়ীরা পাইকারি ও খুচরা দামে বিক্রি করতে ভৈরবে আসেন। এসব কাপড় কিনতে আসেন সিলেটের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, ভৈরবসহ পাশ্ববর্তী কয়েক উপজেলা ও জেলার ক্রেতারা।

ঢাকার সদরঘাট এলাকার কাপড় বিক্রেতা মো. প্রিন্স প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার বিকেলে পিকআপ ভর্তি কাপড় নিয়ে ভৈরবের নৈশ্যকালীন পাইকারি কাপড় বাজারে কাপড় বিক্রি করতে আসেন। তিনি এ প্রতিবেদক’কে বলেন, ভৈরবের নৈশ্যকালীন পাইকারি কাপড় বাজারে প্রতি রাতে কোটি কোটি টাকার কাপড় কেনাবেচা হয়ে থাকে। এখন তো শীতকাল তাই আমরা শীতের কাপড় নিয়ে এসেছি। শীত বাড়ার সাথে সাথে আমাদের বেচাকেনা বেড়েছে। তবে কয়েকদিনের টানা তীব্র শীতের কারণে বাজারে শীতের কাপড়ের চাহিদা বাড়ার কারণে দামও বেড়েছে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভৈরবে শীতের কাপড় বিক্রি করতে আসেন মো. জাবেদ, নিয়ামত উল্লাহ ও শফিক মিয়া। তারা বলেন, প্রতি সপ্তাহে ভৈরবের পাইকারি বাজারে বিভিন্ন ধরণের কাপড় বিক্রি করতে আসছি। এখন শীতের কাপড় বিক্রি করছি। বাজারে প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন রকমের শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। জ্যাকেট, সুইটার, হুডি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকেই খুচরা ব্যবসায়ীরা কাপড় কিনে নিয়ে গিয়ে শহরের ফুটপাতসহ বিভিন্ন শপিং মলে খুচরা বিক্রি করছেন।

তারা আরো বলেন, প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত্রিকালিন কাপড়ের পাইকারী বাজার শুরু হয়ে সারারাত বেচাকেনা হয়ে থাকে। এই বাজারে ভৈরবসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলার পাইকাররা কাপড় কিনতে আসেন। আমরা সবসময় এই বাজারে কাপড় বিক্রি করে থাকি। তবে এখন শীতকাল চলছে তাই শীতের কাপড় বিক্রি করছি। শীত বাড়ার কারণে আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি পরিমাণ শীতের কাপড় বেচাকেনা হচ্ছে বলে তারা জানান।

মার্কেটের দোকানের খুচরা কাপড় বিক্রির জন্য ভৈরবের নৈশ্যকালীন পাইকারি কাপড়ের বাজারে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার পাইকারি দামে কাপড় কিনতে আসেন সুনামগঞ্জ জেলার বিশুম্ভপুর এলাকার খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী মো. মাসুম মিয়া। তিনি বলেন, আগে দোকানে বিক্রির জন্য কাপড় কিনতে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়ায় যেতে হতো। এখন কয়েক বছর যাবত ভৈরবে নৈশ্যকালীন পাইকারি কাপড় বাজারে দেশের সব জায়গার পাইকারি কাপড় বিক্রেতারা কাপড় বিক্রি করতে আসেন। তাই আমরা সহজেই কাপড় কিনে নিতে পারি। আজকে বাহারি ধরণের জ্যাকেট, লেদার, হুডিসহ বিভিন্ন শীতের কাপড় বিক্রির জন্য কিনেছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকার খুচরা বিক্রেতা নাঈম মিয়া বলেন, ভৈরবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় আমরা এখান থেকে শীতের কাপড়সহ বিভিন্ন কাপড় পাইকারি কিনে নিয়ে এলাকায় আমি খুচরা বিক্রি করি।

খুচরা ক্রেতা নরসিংদী রায়পুরার পারভীন বেগম, রোকসানা বেগম, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের রতন মিয়া ও শরীফ মিয়া বলেন, শীত বাড়ার সাথে সাথেই কাপড়ের দামও বেড়ে যায়। শীত বেশীদিন না থাকলেও শীতের তীব্রতা বেশী হওয়ায় পরিবারের জন্য কাপড় কিনতে এসেছি। প্রতি কাপড়ই অনেক দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে ভৈরব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আলহাজ্ব মো. হুমায়ুন কবীর জানান, ভৈরবের সাথে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এখানে দেশের সবচেয়ে বড় কাপড়ের পাইকারি বাজার জমে উঠেছে। রাত্রিকালীন এই বাজারে প্রতি রাতে কোটি কোটি টাকার কাপড় কেনাবেচা হয়। নিরাপদে ব্যবসায়ীরা কাপড় কেনাবেচা করতে পারে বলে আমাদের ভৈরবে দেশের বড় বড় কাপড় তৈরির কারখানার মালিকরা পাইকারি কাপড় বিক্রি করতে আসেন। আগত ব্যবসায়ীরা যেন নির্ভয়ে ব্যবসা করতে পারে সেজন্যই চেম্বারের পক্ষ থেকে সর্বদা নজরদারি ও সহযোগিতা প্রদান করি।

(এসএস/এসপি/জানুয়ারি ১৮, ২০২৪)