ফয়জুল মুনির, পটুয়াখালী : বাউফল উপজেলায় ১০ বছর  বয়সী  খুদে ফুটবলার “কমলিকা সাজ্জাল”এর সাফল্যে উৎফুল্ল এলাকাবাসী। এই শিশু কন্যার পায়ের নৈপুন্যে উপজেলা, জেলা ও বিভাগের গন্ডি পেড়িয়ে পেয়েছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন অনুর্ধ্ব-১৬ ও ১৯’র ট্যালেন্ট হান্ট বালিকা ফুটবলে মনোনীত হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) লেখাপড়া করার সুযোগ পাওয়া ক্ষুদে এই ফুটবলারের নাম “কমলিকা সাজ্জাল”। পটুয়াখালী বাউফল উপজেলা আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন মাধবপুর গ্রামের কমল সাজ্জাল ও শখী রানী দম্পতির কন্যা। উদীয়মান এই খুদে তারকার পিতা কমল সাজ্জাল স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতেন, কমলের স্বপ্ন ছিলো জাতীয় পর্যায় ফুটবল খেলা কিন্তু পারিবারিক অভাব-অনটনে সঠিক প্রশিক্ষণ না পেয়ে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাই স্বপ্ন বুনেছেন মেয়েকে নিয়ে, মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন ‘কমলিকা ফুটবল একাডেমি’। পিতার গড়ে তোলা একাডেমিতেই ছোট থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করে শিশু কমলিকা সাজ্জাল, যার প্রশিক্ষক বাবা।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে নিজ বিদ্যালয় বালিকা দলের পক্ষে খেলেন কমলিকা সাজ্জাল। প্রতিটি ম্যাচে দলনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এনে দেয় কাঙ্খিত সফলতা। পর্যায়ক্রমে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে অগ্রনায়কের ভূমিকায় কমলিকা সাজ্জাল।

প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের ফুটবলের ওই আসরে অংশগ্রহণ করা প্রতিটি ম্যাচেই ম্যাচসেরা এবং অর্ধশত গোল করে মুল আলোচনায় আসে এই খুদে ফুটবলার।

এছাড়াও পটুয়াখালী জেলার অনুর্ধ্ব-১৭ বালিকা ফুটবল দলের সহকারী অধিনায়ক ছিলো কমলিকা সাজ্জাল। এর আগে মানিকগঞ্জ জেলার সাথে একটি ম্যাচে নিজ জেলার হয়ে চমৎকার ৫টি গোল করে বাফুফের কর্মকর্তাদের নজরে আসে, পরে ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে বাফুফের প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই পর্বের ম্যাচে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে কমলিকা সাজ্জাল।

অন্যদিকে বিকেএসপির বাছাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সারাদেশ থেকে নির্বাচিত ২৫ জনের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থান দখল করে নিয়েছে শিশু কন্যা ফুটবলার কমলিকা সাজ্জাল। কমলিকা সাজ্জালের অর্জনের ঝুলিটা বেশ লম্বা ! ১০ বছর বয়সে ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় হয়েছে ৩৮ বার। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে হয়েছে টুর্নামেন্টর সেরা খেলোয়াড়, হয়েছে সেরা গোলদাতা ও পেয়েছে সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব।জাতীয় পর্যায়ে নিজ জেলার সর্বকনিষ্ঠ হয়ে পেয়েছে ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দেয়াই একমাত্র স্বপ্ন জানিয়ে খুদে ফুটবলার কমলিকা সাজ্জাল সাংবাদিকদের বলেন, আমি জাতীয় দলে খেলতে চাই, সঠিক প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কৃষ্ণা রানী ও ঋতুপর্ণা চাকমার মতো বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিতে চাই।

এ সময় কমলিকা তার বাবা ফুটবল কোচ কমল সাজ্জালের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে পিতার অক্লান্ত পরিশ্রমেই আজ এই উচ্চতর স্থানে আমি “কমলিকা সাজ্জাল”। মাধবপুর নিশীকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবু জয়দেব শিকারী বলেন, উপজেলার ১০৬নং মাধবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫ম শ্রেণির ছাত্রী, বিভিন্ন সময় তার খেলা তিনি দেখেছেন, একজন ক্ষুদে খেলোয়াড় হিসেবে তার খেলা আসলেই মনোমুগ্ধকর। অবশ্যই যথাযথ যোগ্যতার ভিত্তিতে বাফুফে কমোলিকাকে জাতীয় পর্যায়ে খেলার জন্য মনোনীত করেছে। এই অজ পাড়াগাঁয়ের কন্যা শিশু তার প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে এটা কমলিকা সাজ্জালের প্রাপ্য-প্রাপ্তি। আমরা এলাকাবাসী কমলিকা সাজ্জালের জন্য গর্বিত।

(এফএম/এএস/জানুয়ারি ২৫, ২০২৪)