শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : "মনে হয় বরফ পড়ছে বাহে, জাড়ের হিয়ালে হা-পাও ককড়া লাগি আইসেছে। রাইতোত ঘুম আইসেনা। কেথা- কম্বলোত মনে হয়,কেহ পানি ঢালি দিছে।হামার উপায় নাহি বাপো। না খাইতো বাচা যাবেনাহায়।এই তন্ন্যে খুব সকালেই কামের তন্ন্যে বের হইবা হইচে। এখনো কাম পাওনাই।জানো না আইজ ভাইগত কী আছে।"

এমনি আকুতি প্রকাশ করলেন, মোস্তাফিজুর রহমান। বিরল উপজেলার কানদেবপুর এলাকার ষাটোর্ধ মোস্তাফিজুর একজন শ্রমজীবী। জোগালি কাজ করেন।

দিনাজপুরের 'মানুষ বেচার হাট' খ্যাত শহরের ষষ্টিতলায় শ্রমবাজারে এপ্রতিবেদকের কথা হয় তার। প্রতিদিন বাইসাইকেলে চেপে ১৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আসতে হয় তাকে কাজের সন্ধানে। কয়েকদিনের দিনাজপুর দিয়ে বয়ে লাগাতার শৈত্য প্রবাহে হিমেল হাওয়া আর হাঁড় কাঁপানো শীতকেও হার মানিয়ে তারা ছুঁটে আসেন,মানুষ বেচার হাট শ্রম বাজারে। কোন দিন কাজ পায়,কোন দিন পায়না।কাজের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। মলিন মুখে বাড়ি ফিরিলেও বউ-সন্তানদের বোকা-ঝোকা খেতে হয়। তারা নাকি বলে " হাওয়া খাইবা গেছুলু -! এতখন থাকি কী করিছুলু!! বাড়িত আসিবা কী দরকার আছোলো।যাও আরো হাওয়া খাও-"
এমন অনেক গালা-গাল নাকি এখন শুনতে হয় পরিবারের কাছে।

তীব্র শীতের কারণে কোন কর্ম নেই তাদের।অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। আয়-উপার্জন নেই তাদের। বিপাকে পড়েছেন,খেটে খাওয়া শ্রমজীবী নিন্ম আয়ের মানুষ।

শীতে কাঁপছে উত্তরের সীমান্ত ঘেষা হিমালয়ের পাদদেশের জেলা দিনাজপুর। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) এ জেয়ার সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল বাতাসের প্রভাব ঠান্ডার অনুভুতি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

দেখা মিলছেনা সূর্যের মুখ। ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারপাশ। একারণে দিনের বেলাতেই সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
তীব্র শীতের কারণে মানুষজন খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। মানুষজনের চলাচল একেবারেই কম।

নিম্নমুখী এই তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত সহকারি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। আগামী কয়েকদিনে এই তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানান তিনি।

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলজ হাসপাতাল ও সদর জেনারেল হাসপাতাল সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে শীত জনিত রোগের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তীব্র শীতে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা জনিত রোগ শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। শুধু মানুষ নয়,গবাদি পশু,পাখি ও প্রাণিকুলেরও নাকাল অবস্থা। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রকোপে ক্ষেতে ফসলের অবস্থাও ভালো নয়। আলু এবং বোরোধান চাষাবাদ নিয়ে দু:চিন্তায় চাষিরা।

(এসএএস/এএস/জানুয়ারি ২৭, ২০২৪)