সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর পুনারায় ড্রেজিং শুরু হয়েছে। ড্রেজিং করা বালু মাটি রাখার জায়গার (ডাইক) জটিলতা কেটে যাওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে মোংলা বন্দরের বেসক্রিক বয়া এলাকা থেকে এই ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়। ড্রেজিং এলাকা সেকশন-৪ এর আওতায় বাল্কহেড ড্রেজারের মাধ্যমে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এতথ্য নিশ্চিত  করেছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার রাসেল আহম্মেদ খাঁন জানান, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া এলাকা থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত এলাকার নাম ‘ইনার বার’। ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ইনারবারের ২৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার এলাকায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু হয় ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল। ড্রেজিং করা বালু মাটি ফেলার জন্য বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় ৭০০ একর জমি ও খুলনার দাকোপ উপজেলায় বানিশান্তা এলাকায় ৩০০ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। মোংলা উপজেলার জয়মনি এলাকার জমিতে বালু ফেলা হয়। কিন্তু পশুর নদের পাশে খুলনার বানিশান্তার তিন ফসলি জমিতে বালু ফেলা ঠেকাতে আন্দোলন করেন এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির মুখে সেখানে বালু মাটি ফেলার জায়গা সংকটে ৩৪ শতাংশ কাজ শেষে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় ড্রেজিং কার্যক্রম। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০২২ সালের জুন মাসে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে ৯৯২ কোটি টাকায়, যা গত বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে।

ইনারবারের গভীরতা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মিটার। ড্রেজিং করে সাড়ে সাড়ে আট থেকে নয় মিটার গভীরতা করতে ড্রেজিং করা স্থানগুলো থেকে যে পরিমাণ পলি অপসারণ করা হয়েছিল, গত প্রায় দুই বছরে ড্রেজিংয়ের ৭০ ভাগ এলাকায় পলিমাটি আবার জমা হয়েছে। এ অবস্থা ড্রেজিং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সেই থেকে প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজিং বন্ধ থাকার পর শুক্রবার সকাল থেকে পুনরায় ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ড্রেজিংয়ের বালু মাটি ফেলা হচ্ছে মোংলার হুকুমদখল করা জয়মনির পুরাতন এলাকায়। পাশাপাশি মোংলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের শানবান্ধা মৌজায় ২৬২ একর জায়গায় বালু ফেলার জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহনের একটি প্রস্তাব বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

মোংলা বন্দর বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর আর্ন্তজাতিক সমুদ্র বন্দরটি সচল রাখার স্বার্থে নিয়মিত বন্দরের নৌ চ্যানেল ড্রেজিংয়ের বিকল্প নাই। ২০২১ সালের ১৩ মার্চ শুরু হওয়া ইনারবারে ড্রেজিংয়ের খননকৃত পলি মাটি রাখার জায়গার অভাব দেখা দিলে মাঝপথে বন্ধ থাকে। ইনারবারে ড্রেজিং বন্ধ থাকলেও নৌ চ্যানেল স্বাভাবিক ছিল। জাহাজ চলাচলে সমস্যা হয়নি। তবে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা না গেলে ভবিষ্যতে বানিজ্যিক জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হবে। এখন আপাতত খননকৃত পলি মাটি রাখার জায়গা নির্ধারণ হওয়ায় শুক্রবার থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ড্রেজিং কার্যক্রম শুরুর আগে সার্ভে করে দেখা হয়েছে ইনারবারে কতটুকু পলি জমেছে। সেই সার্ভে শেষ করে এই ড্রেজিং শুরু করা হয়েছে। এখন ড্রেজিংয়ের মাটি রাখা হচ্ছে পুরাতন জয়মনি এলাকায়। এবার চ্যানেলে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রাখতে নৌ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে।

(এস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪)