শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : প্রায় ২৩ কোটি টাকা,বকেয়া থাকায় দিনাজপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পিডিবি। এতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে দিনাজপুর পৌর কর্তৃপক্ষ। ভোগান্তি পোহাচ্ছে পৌরবাসী। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, নবায়ন, পানির বিলসহ ডিজিটাল অনলাইন মুলক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। তবে, পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন জেনারেটর চালিয়ে সবধরনের সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ভোরবেলা পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিক্রয় ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো। এতে করে চারদিন ধরে পৌর কর্তৃপক্ষ জেনারেটর চালিয়ে জনসেবা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল। তিনি বলেন, কোন নোটিশ না দিয়েই লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অপরদিকে পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো দিনাজপুর প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলছেন, নোটিশের মাধ্যমে জানিয়েছেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

নেসকোর প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রায় ২৩ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়ীত্ব রয়েছেন প্যানেল মেয়র-০১ আবু তৈয়ব আলী দুলাল। অপরদিকে নেসকো দিনাজপুর-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিদেশে তাকায় দায়ীত্বে রয়েছেন দিনাজপুর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান।

এ ব্যাপরে নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, 'প্রায় ২৩ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছিল তারা প্রতি মাসের চলমান বিল পরিশোধ করবেন। কিন্তু এতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।'

অন্যদিকে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল বলেন, কোন নোটিশ ছাড়াই বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমি গত ১০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়ীত্ব গ্রহণ করি। এ সময় নেসকো দিনাজপুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। তাদের আমি জানিয়েছিলাম প্রতি মাসের চলমান বিল পরিশোধ করব। সেই কথা অনুযায়ী নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছি। গত ৩০ তারিখ আমি বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে রংপুরে মিটিং এ থাকায় পরদিন ৩১ তারিখ সকালে জানুয়ারী মাসের বিলের চেক প্রদান করি। কিন্তু তারা কোন নোটিশ ছাড়াই ভোরে বিদ্যুৎ ল্ইান বিচ্ছিন্ন করেন। এতে করে সব ধরণের সেবা যেমন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, সনদ, অনলাইনে ট্রেড লাইনেন্স নবায়ন, পানির বিল প্রদানসহ ডিজিটাল সেবা এবং পৌরসবার স্বাস্থ্য বিভাগের ফ্রিজে থাকা শিশুদের বিভিন্ন প্রকার টিকার অ্যাম্পুল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

‘আমি এবং আমার প্রকৌশলীরা তাদের সঙ্গে একাধিকবার তাদের সঙ্গে স্বাক্ষাতে দেখা করে জানুয়ারী মাসের বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৩১ জানুয়ারী ইস্যুকরা ১১ লক্ষ টাকার চেকটি গ্রহণ করার জন্য বলি। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে চেকটিও গ্রহণ করছেনা এবং বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হচ্ছেনা। এতে বাধ্য হয়ে জেনারেটর চালিয়ে পৌরসভায় জনবেসা সচল রেখেছি। অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে নেসকো দিনাজপুর-২ এর অফিসের জায়গার ভাড়া বাবদ ৩৩ কোটি টাকা পাবে দিনাজপুর পৌরসভা। সেটি তারা পরিশোধ করছেনা। কই আমরা তো তাদের অফিস বন্ধ করে দেই নাই। তাছাড়া দিনাজপুর পৌরসভার সাড়ে ২২ কোটি টাকা যে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে এটি আমার দায়িত্ব গ্রহণ করার আগের। প্রায় ২৫ বছর ধরে এই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে।’

তিনি বলেন, এর আগে ২০ বছরের বিল বকেয়া ছিল। ১৮/১৯ বছর আগে যখন বীরমুক্তি যোদ্ধা সফিকুল হক ছুটু মেয়র ছিলেন, সে সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে পৌরসভার জায়গার ভাড়া নিয়ে বৈঠক হয়। সে সময় পৌরসভার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জায়গার ভাড়া পরিশোধ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তারা এখনো সেই ভাড়া পরিশোধ করেননি। যদি বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এবং বকেয়া জায়গার ভাড়া যোগ বিয়োগ করা হয় তাহলে পৌর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে সাড়ে ১১ টাকা পাবেন।

প্রসঙ্গত: এবার নিয়ে গত ২০ বছরে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নিয়ে দিনাজপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ লাইন ৪'বার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪)