শিতাংশু গুহ


সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঝড়ের বেগে রিপাবলিকান দলীয় মনোনয়নের পেতে চলেছেন, কিন্তু তাঁর যাত্রাপথ ততটা মসৃন নয়। প্রতিটি পদক্ষেপে ডেমক্রেটরা তাঁকে ঠেকাতে উদ্যত। ব্যালটে আদৌ তার নাম থাকবে কিনা সেই সংশয় আছে। না থাকলে কি হবে? ট্রাম্প যদি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হ’ন, তাহলে কি হবে? ইলিনয়েস ও নিউইয়র্ক প্রাইমারিতে ব্যালটে ট্রাম্পের নাম রাখার পক্ষে রায় দিয়েছে নির্বাচনী বোর্ড। সুপ্রিমকোর্ট কি ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করবে? তাহলে কি ট্রাম্প সমর্থকরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে? দায়িত্ব এড়িয়ে সুপ্রিমকোর্ট কি বিষয়টি কংগ্রেসের ওপর ছেড়ে দেবে? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। যাই ঘটুক, ট্রাম্প বিপদে আছেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন হটাৎ মরে গেলে কি হবে? সংবিধান অনুযায়ী ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হবেন। হ্যারিস প্রাইমারি প্রতিদ্ধন্ধিতায় নামবেন। সেক্ষেত্রে অন্য প্রার্থীরা মাঠে নামবেন। প্রাইমারি চলা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট মারা গেলে বিভিন্ন ষ্টেট প্রাইমারি বন্ধ রাখতে পারে, যেমনটা করেছিলো কোভিড-১৯’র সময়। প্রাইমারির শেষে, অথচ ডেমক্রেটিক কনভেনশনের আগে প্রেসিডেন্ট মারা গেলে দলীয় নেতারা নমিনেশন চাইতে পারেন, সেক্ষেত্রে দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট যদি দলীয় মনোনয়ন লাভের পর, অথচ নির্বাচনের আগে মারা যান, সেক্ষত্রে ডেমক্রেট ও রিপাবলিকানদের স্পষ্ট গাইডলাইন অনুযায়ী দল নুতন প্রার্থী দেবে।

আপিল বিভাগে ট্রাম্প আবেদন করেছিলেন যে, ৬ জানুয়ারি ২০২০ তিনি যা করেছেন, তা প্রেসিডেন্ট হিসাবে করেছেন, এবং সেটি বিচার করার এখতিয়ার আদালতের নেই, তাই তার বিচার হতে পারেনা। ৩ জন বিচারক নিয়ে গঠিত আপিল বিভাগ মঙ্গলবার ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সর্বসম্মতভাবে রায় দিয়েছেন যে, হোয়াইট হাউসের সাবেক বাসিন্দা বিচারের উর্দ্ধে নন, সুতরাং ট্রাম্পের বিচার চলতে পারে। আদালত আপিলের সুযোগ রেখেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সুপ্রিমকোর্টে আপিল করবেন। আপিল বিভাগ সুপ্রিমকোর্টের ঠিক একধাপ নীচের আদালত। ট্রাম্পের ভাগ্য এখন সুপ্রিমকোর্টের ওপর নির্ভরশীল।

ক্লাসিফাইড ডক্যুমেন্ট অযত্ন ও অবহেলায় রাখা, ও হস্তান্তরে বিঘ্ন সৃষ্টির দায়ে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়। একই অপরাধে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছেনা। ওয়াশিংটন টাইমস মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জানায়, স্পেশাল কাউন্সিল রবার্ট হুড় নথিপত্র অবহেলায় বাইডেনের ওপর বিরক্ত, তবে বাইডেনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করছেন না। ট্রাম্প এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমার চেয়ে ১০গুন্ বেশি ডক্যুমেন্ট ছিলো বাইডেনের কাছে, এবং তা অযত্ন ও অবহেলায় ছিলো।

তিন দশকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ট্রাম্প হয়তো এবার রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। মধ্য মার্চের আগেই সেটি সম্ভব। নেভাদা ককাস জয়ের পর সাউথ ক্যারোলিনা প্রাইমারি ২৪শে ফেব্রুয়ারি, মিশিগান ২৭শে ফেব্রুয়ারি, এবং এরপর একসাথে ১৬টি ষ্টেট , ৫ই মার্চ সুপার টুইসডে। এই ষ্টেটগুলো হচ্ছে: আলাবামা, আরকানসাস, আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, আইওয়া, মেইন, ম্যাসাচুসেটস, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলিনা, টেক্সাস, উত্তাহ, ভারমন্ট ও ভার্জিনিয়া। এতে প্রায় সবগুলো ষ্টেটে ট্রাম্প জয় পেতে পারেন। নিকি হেলি’র হয়তো সুপার টুইসডে পর্যন্ত রেসে থাকছেন।

গুরুত্বহীন নেভাদা প্রাইমারিতে (৬ই ফেব্রুয়ারি) নিকি হেলি মান-ইজ্জ্বত খুইয়েছেন। ট্রাম্প সেখানে প্রার্থী ছিলেন না, তবু নিকি হেলি দ্বিতীয় হয়েছেন। প্রথম হয়েছে ‘নান’? ব্যালটে একটি ঘর ছিলো, ‘নান, ওপরের কোন প্রার্থী না’- এই নান-এ ভোট পড়েছে ৬৩.২%, হেলি পেয়েছেন ৩০.৫%। রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেহান্দ্রো মায়োর্কাস-কে অভিশংসন করতে ব্যর্থ হয়েছে। হাউসে ভোটে তা পাশ হয়নি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হোয়াইট হাউস এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে পলিসি নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে আলেহান্দ্রো কোন অপরাধ করেননি।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।