স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : মির্জাপুরে মাটি খেকোদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত নদীর পাড় ও কৃষি  জমি। কখনও রাতে কখনও দিনে খননযন্ত্র দিয়ে চলছে মাটি কাটার ধুম। তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান চালালেও মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে  না বলে দাবি করছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই গোড়াই ইউনিয়নের রশিদ দেওহাটা, লতিফপুর ইউনিয়নের যোগীরকোফার মৌজার বংশাই নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে ট্রাকে ভরে নেওয়া হচ্ছে। ফতেপুর ইউনিয়নেও বংশাই নদীর চাকলেশ্বর থেকে পারদিঘি ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত অন্তত ১০টি স্থানে ভেকু ও ড্রেজার দিয়ে নদীর পাড় ও নদীর মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জামুর্কী ইউনিয়নের গুনটিয়া এলাকায় লৌহজং নদী থেকে ভেকু দিয়ে মাটি লুট করা হচ্ছে।

এ ছাড়া গোড়াই ইউনিয়নের পাথালিয়াপাড়া এলাকায় তিন ফসলি জমি থেকে কয়েকটি ভেকু দিয়ে প্রতিদিন মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে জমিগুলো চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। একইভাবে বানাইল ইউনিয়নের মাঝালিয়া গ্রামের ফসলি মাঠ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। পৌরসভার বাওয়ার কুমারজানী বংশাই নদীর পাড়ে হাতেম টাউন এলাকা থেকে প্রতি রাতে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। ফসলি জমির মালিকরা নিরুপায় হয়ে নামমাত্র মূল্যে মাটি বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালালে কিছু সময়ের জন্য মাটিকাটা বন্ধ থাকে। তবে প্রশাসনের লোকজন সরে গেলেই শুরু হয় ফের মাটি লুটপাট।

মাটি লুটের কারণে প্রতিবছর নদীভাঙন হয় এবং আগামীতেও ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফতেপুর ইউনিয়ন বাসী। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়কগুলো মাটিভর্তি শত শত ড্রাম ট্রাক চলাচলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব ট্রাক এবং ভেকুর শব্দে মানুষ রাতে ঘুমাতে পারেন না বলে জানান মাঝালিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান মতি।

গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, পাথালিয়া এলাকার ফসলি জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। যোগীরকোফা ও রশিদ দেওহাটা এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে। আবার বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের প্রয়াত খুশি মিয়ার বাড়ির পেছনে নদীর ওপর একটি বাঁধ নির্মাণ করতে দেখা গেছে। মাটি লুটের জন্য বাঁধটি ব্যবহৃত হবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

গোড়াই ইউনিয়নের পাথালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন জানান, মাটিবাহী ট্রাক চলাচলে রাস্তার পাশে থাকা বসতবাড়ি ও ফসলি জমিতে ধুলোর স্তর পড়ছে। এতে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এলাকার বৃদ্ধ এবং শিশু-কিশোররা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

গোড়াই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য লিটন মিয়া বলেন, পাথালিয়াপাড়ায় মাটি কাটা বন্ধের জন্য গত বছর উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি দেন তিনি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর জানান, তাঁর ইউনিয়নে কোথায় কোথায় অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছে তার একটা তালিকা চেয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)।

ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে মির্জাপুরে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার পাল।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান বলেন, প্রতিনিয়তই ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকেও আজগানা ইউয়িনের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ড্রাম ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া শাহাদত নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিনের ভাষ্য, প্রায় প্রতিদিনই মাটি লুটেরাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। গত শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে ছয়টি ভেকু এবং ১২টি ড্রাম ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন মাটি লুটেরার কাছ থেকে প্রায় ছয় লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

(এসএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৪)