শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর : একই খেতে সবুজ পাতার ভেতর থেকে দেখা যাচ্ছে তিন ধরণের ফুলকপি ও রঙিন বাধাকপি। হলুদ, গোলাপি ও সাদা রঙের ফুলকপি ও বেগুনি রঙের বাধাকপি। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এই প্রথম রঙিন কপি চাষ করে তাক লাগিয়েছেন কৃষক মোঃ শহীদুল্লাহ। বাজারের চাহিদা ও দামবেশী থাকায় লাভবান হচ্ছেন তিনি।

উপজেলার তাঁতকুড়া গ্রামে বাড়ি মোঃ শহীদুল্লাহর। তিনি তার বাড়ির পাশে ৬৫ শতক জমির ২০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপি আর ৫ শতক জমিতে রেড ক্যাবেজ (রঙিন বাঁধাকপি) ও ৪০ শতক জমিতে সাদা ফুলকপির চাষ করেছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, এ উপজেলায় এই প্রথম দুটি জাতের রঙিন ফুলকপির চাষ করা হয়েছে। হলুদ রঙের ফুলকপির নাম ক্যারোটিনা আর গোলাপি রঙের ফুলকপির নাম ভ্যালেন্টিনা। এগুলি দেখতেও সুন্দর, সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণও বেশি। গতানুগতিক সাদা রঙের চেয়ে রঙিন ফুলকপির বাজারমূল্যও বেশি।

সরেজমিনে তাঁতকুড়া গ্রামের মোঃ শহীদুল্লাহর ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, কিছুটা লম্বা সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে আছে হলুদ ও গোলাপি রঙের রঙিন ফুলকপি। আর বেগুনি রঙের বাধাকপি।

কৃষক মোঃ শহীদুল্লাহ জানান, তিনি উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের মাধ্যমে এই রঙিন জাতের ফুলকপির বীজ আনেন। রঙিন দুই জাতের ফুলকপি সাধারণ ফুলকপির মতোই পরিচর্যা করতে হয়। অল্প জমিতে এই ফুলকপি চাষ করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। রঙিন ফুলকপি চাষে বাড়তি কোন শ্রম ও খরচ নেই। তাছাড়া কোনো ফসলেই তিনি বিষ ব্যবহার করেন না। ব্যবহার করেন জৈবসার। রয়েছে জৈবসার আর কেঁচো সার উৎপাদনের নিজস্ব কারখানাও। রঙিন ফুলকপি প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা বিক্রি করেছেন আর সাদা ফুলকপি প্রতিটি ২৫-৩০ টাকা বিক্রি করছেন বলেও তিনি জানান।

প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে রঙিন ফুলকপির ফলন দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন বলেও তিনি জানান।

মোঃ শহীদুল্লাহ আরও জানান, ৬৫শতক জমিতে এবার তিনি রঙিন ফুলকপি, রঙিন বাঁধাকপি ও সাদা ফুলকপি চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। তিনি আনুমানিক ২লক্ষ টাকা বিক্রি করবেন এই কপিগুলি।

শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম ও নন্দীগ্রামের কৃষক আঃ জলিল রিপন বলেন, রঙিন ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ দেখতে এসেছি। দেখতেও সুন্দুর। বাজারে এই ফুলকপির চাহিদার পাশাপাশি সাদা ফুলকপির চেয়ে দামেও বেশি। তা দেখে আমরা উৎসাহিত হয়েছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র সরকার বলেন, বৃহত্তম ময়মনসিংহ অঞ্চলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় মোঃ শহীদুল্লাহকে বেগুনি ও হলুদ রঙের ফুলকপি ও রঙিন বাঁধাকপি (রেড ক্যাবেজ) প্রদর্শনীটি দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন সবজি চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা ও অধিক লাভবান হতে পারে এটা নিশ্চিত করা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন জলি বলেন, মোঃ শহীদুল্লাহ একজন আদর্শ কৃষক। তিনি সবসময় ব্যতিক্রমী কিছু করতে চায়। রঙিন ফুলকপি সাদা ফুলকপির তুলনায় অধিক পরিমাণে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। বাজারে এই ফুলকপির চাহিদা রয়েছে। এটি বাজারে ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে রয়েছে বিটা-কেরোটিন ও এন্থোসায়োনিন্স যা রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।

(এস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৪)