মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গয়ঘর গ্রামের নবিনা বেগম (৬০) নামে এক গৃহিনীর বাম পা’য়ে ফুঁড়া থেকে পচন ধরে যাওয়ায় কেটে ফেলা হয়েছে। এতে পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যান এই নারী। গত মাসে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা পুরো পা’য়ে পচন ধরে রক্ত চলাচল বন্ধ ও রগ পচে যাওয়ায় বাম পা হাটু পর্যন্ত কেটে ফেলেন। প্রতিবন্ধী স্বামী আর দুই ছেলে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি। ছেলেরা টিউশনী করে কোনরকম পরিবার চালিয়ে আসলেও মায়ের চিকিৎসা চালাতে গিয়ে বড় অঙ্কের ঋণের ভেড়াজালে পড়ে যান তারা। বিষয়টি জানতে পেরে নবিনার চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তায় এগিয়ে আসেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত মৌলভীবাজারের প্রবাসীরা। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুই লক্ষ টাকা নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। প্রবাসীরা বলছেন ওই অসহায় নারীর পাশে তারা আছেন। অর্থের আরও প্রয়োজন হলেও তারা পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নবিনা বেগমের পরিবারকে।

গত শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নবিনা বেগমের বাড়িতে প্রবাসীরা উপস্থিত হয়ে "আমরা ১১ নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নবাসী হোয়ার্টসঅ্যাপ গ্রুপ" নামক সংগঠনের ব্যানারে নবিনা বেগমের পক্ষে তাঁর ছেলে ইমরান আহমদ এই অর্থ গ্রহণ করেন। চিকিৎসার এই তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ নেতা রাধাকান্ত ধরসহ অন্যান্য প্রবাসীরা।

টাকা হস্তান্তরকালে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবক ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আব্দুর রব, সৈয়দ আবু আলমগীর, আব্দুর রকিব বাবুল, তোয়াছির আলী ও শাহীন আহমদ।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি শ্রীকান্ত ধর, সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুম, ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ ও সমাজকর্মী জুবায়ের আলী আহমদ প্রমুখ।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের আগষ্টের দিকে নবিনা বেগমের বাম পায়ে ফুঁড়া ( এ্যাবসেস) সৃষ্টি হয়। তাতে ক্ষত তৈরি হয়ে ধিরে ধিরে বেড়ে এক পর্যায়ে পুরো পায়ে পচন ধরা শুরু হয়। তীব্র যন্ত্রণায় কাৎরাতে থাকেন চার মেয়ে আর দুই ছেলের জননী ষাটোর্ধ এই নারী। নিম্নবিত্ত অভাবের সংসার। ছেলে টিউশনি করে কোনরকম পরিবার চালায়। সবমিলিয়ে পরিবারটি নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। এরই মধ্যে নবিনা বেগমের সন্তানদের মধ্যে তাদের মা'কে নিয়ে চিন্তার ভাঁজ শুরু হয়।

নবিনা বেগমের মেয়ে শিপা বেগম জানান, তাঁর মায়ের পায়ে পচন বৃদ্ধি পেতে থাকলে তারা প্রথমে নিয়ে যান মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা পা দেখে কেটে ফেলা ছাড়া কোন বিকল্প নেই বলে জানান। তাছাড়া রুগীর অবস্থা স্পর্শকাতর হওয়ায় চিকিৎসকরা পরবর্তীতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। কিন্তু চিকিৎসার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন সেটা নিয়ে রীতিমতো মারাত্মক চিন্তায় পড়ে যান নবিনা বেগমের সন্তানেরা। এক পর্যায়ে তাদের মায়ের পা রক্ষা করতে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণ করে বেশ কিছু অর্থ সংগ্রহ করে নিয়ে যান সিলেটের ওই হাসপাতালে। ভর্তির পর ওসমানী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা অনান্য পরীক্ষার পাশাপাশি পুরো পা এক্সরে করতে নির্দেশ দিলে পা এক্সরে করা হয়। এর পর এক্সরে রিপোর্ট পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা দেখতে পান পায়ের যে রগগুলো আছে সেগুলো পচে গেছে। রক্ত চলাচলও বন্ধ। এমন অবস্থায় পা কেটে ফেলা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই তাদের কাছে। আর নবিনা বেগমও পায়ের যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি যন্ত্রতা থেকে রক্ষা পেতে পা কেটে ফেলতে চাইলে সেখানকার চিকিৎসকরা পা'টি কেটে ফেলেন। এর কিছুদিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে কাটা পা নিয়ে পঙ্গুত্ব মাথায় নিয়ে ফিরে আসেন নিজের বসতভিটায়।

এদিকে প্রবাসীদের দেয়া অর্থ পেয়ে শত কষ্ট আর অনিশ্চিত জীবনের মাঝেও খুশি নবিনা বেগম ও তাঁর সন্তানেরা। এমনিতেই এই নারীর চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে নিঃস্ব তাঁর পরিবার। তাঁর উপর রয়েছে ঋণের বুঝা।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী তোয়াছির আলী বলেন, আমাদের ১১ নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের প্রবাসীরা পরিশ্রম করে এই অসহায় নারীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসীদের মধ্যে সেতুবন্ধনের সামাজিক মাধ্যম হোয়ার্টসঅ্যাপ গ্রুপ" থেকেই মূলত এই অর্থ সহায়তার কাজটি শুরু করা হয়।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪)