সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : স্বামীর সংসারে সুখ আর হলোনা শিক্ষিকা রুনার কপালে। যৌতুকের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় বান্দনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা রুনা আক্তারকে বেধড়ক পিটিয়েছেন রুনার স্বামী রিয়াজ ও ভাসুর অলি উল্লাহসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। গুরুতর আহত হয়ে রুনা আক্তার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের কচন্দারা গ্রামে রুনার স্বামীর বাড়িতে। 

জানা যায়, প্রায় ১৩ বছর আগে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের কন্যা রুনা আক্তারের সাথে প্রেম পরিনয়ে বিয়ে হয় কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের কচন্দরা গ্রামের আছাব উদ্দিনের ছেলে রিয়াজ আহমেদ সিরাজের। রুনা তার মামলার এজাহারে অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের ৭ বছর পর তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষকের চাকরি হয়। এর পর থেকেই স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। তাদের চাপে এক পর্যায়ে রুনা আক্তার সোনালী ব্যাংক কেন্দুয়া শাখা হতে ৪ লাখ টাকার ঋণ উত্তোলন করে স্বামী ও ভাসুরের হাতে তুলে দেন। স্বামী ও ভাসুর ঋণের টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যায় কিন্তু ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও সংসার পরিচালনা করতে হয় রুনাকেই। স্বামী রিয়াজ বেকার থাকায় এভাবেই অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেই রুনাকে এক যুগ সময় স্বামীর সংসারে পার করতে হয়েছে। এরই মধ্যে রুনা ৪ সন্তানের মা হয়েছেন।

আজ রবিবার দুপুরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে রুনা আক্তার বলেন, আমাকে বারবার অত্যাচার নির্যাতন করলেও আমি স্বামীর সংসার করার চেষ্টা করেছি। গত কয়েকমাস আগেও আমার স্বামী ও ভাসুর আমার বাবার বাড়ি থেকে আরও ১০ লাখ টাকা এনে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আমার স্বামী রিয়াজ ও ভাসুর অলি উল্লাহ আমাকে কিল ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এলোপাতাড়ী মারপিটের এক পর্যায়ে আমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায় আমি অজ্ঞান হয়ে পরি। জ্ঞান ফিরলে আমার সন্তানদের সহযোগিতায় অটোরিক্সা যোগে নেত্রকোণা হাসপাতালে যাই। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে শনিবার রাতে কেন্দুয়া থানায় স্বামী ও ভাসুরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেই। রাতে আবার পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হলে আমি কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। রুনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমি আমার সন্তানদের বাঁচাবার জন্য বাঁচতে চাই। বিচার চাই স্বামী ও ভাসুরের।

রুনা আরও বলেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার আমাকে অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। কয়েকটি ঘটনা স্থানীয়ভাবে মিমাংসাও হয়েছে। আবার ২/৩ বার পুলিশের কাছে অভিযোগও করেছি। কিন্তু পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিলে আমাকে আর এভাবে নির্যাতন সইতে হতো না। আমি পুলিশের আন্তরিক সহযোগিতা চাই।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য রুনার স্বামী রিয়াজ আহমেদ সিরাজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। ফোন বন্ধ এবং তিনি এবং তার ভাই অলি উল্লাহ বাড়িতে না থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যাইনি। কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ এনামুল হক বলেন, শিক্ষিকা রুনা আক্তারের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আইনগতভাবে যা যা করা দরকার সবই করা হবে। অভিযোগটি তদন্ত চলছে এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।

এদিকে শিক্ষিকা রুনাকে বেধড়ক পিটুনির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কেন্দুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জামিরুল হক এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি কেন্দুয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিক্ষিকা কল্যানী হাসান।

(এসবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪)