গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গ্রামটি বিল বেষ্টিত। গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদে  যাতায়াতের জন্য ২ বছর আগে ৫০০ মিটার দীর্ঘ মাটির রাস্তা নির্মাণ করে দেয় সরকার । এই রাস্তার প্রস্ত ১০ ফুট। ১ বছর আগে ওই রাস্তায় ইট বসানো হয়।

স্থানীয় শেখ ও মোল্লা বংশের লোকজন রাস্তা নির্মাণে সমঝোতা করে জায়গা দিয়েছেন। শেখ বংশের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাস্তা হয়নি। অতি সম্প্রতি শেখ বংশ রাস্তাটির বাঁক সোজা করতে মোল্লা বংশের কাছে পৌনে ১ শতাংশ জায়গা দাবি করে । কিন্তু মোল্লা বংশ এটি দিতে রাজি হয়নি। এ কারণে গত ৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) শেখ বংশের ইউপি মেম্বার মোঃ মুরাদ শেখ বেড়া দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন । এতে গ্রামাবাসীর মসজিদে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদের আশপাশে বসবাসকারী ৫০ টি পরিবার এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারছে না। রাস্তায় ভ্যান ও ইজিবাইক ঢুকতে পারছে না। মালামাল পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটছে।

এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পারইহাটি দক্ষিণপাড়া গ্রামে।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ মুরাদ আলী শেখ বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ও আমার চাচাতো ভাইয়েরা রাস্তা নির্মানের সময় ১০ শতাংশ জমি দিয়েছি। মসজিদের জায়গা দিয়ে আমাদের বাড়িতে ঘুরিয়ে রাস্তা নিতে হয়েছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ সেখানে ওজুখানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি হলে ওই রাস্তা দিয়ে আমরা বাড়িতে যাতায়াত করতে পারব না। তাই আমরা রাস্তাটি সোজা করার জন্য মোল্লা বংশের কাছে মাত্র পৌঁনে ১ শতাংশ জায়গা চেয়েছি। তারা জমি দিতে রাজি হয়নি। উল্টো তারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে।ওই বংশের অনেকেই সরকারি চাকরি করেন। তারা খুবই প্রভাবশালী। তাদের ব্যবহারে ক্ষিপ্ত হয়ে আমরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। পৌঁনে ১ শতাংশ জমি দিলে রাস্তা খুলে দেব।

প্রতিপক্ষ পারইহাটি দক্ষিণপাড়া গ্রামের মোঃ এনামুল হক মোল্লা বলেন, ২ বছর আগে মেম্বারের তত্ত্বাবধানে ঘুরিয়ে মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয় । ১ বছর আগে রাস্তায় ইট বসানো হয় । এখন মেম্বার রাস্তাটি সোজা করে আমাদের বাড়ির মধ্য দিয়ে নিতে চাইছেন। আমাদের বাড়ির মধ্যদিয়ে রাস্তা নিলে আমাদের ৪ ভায়ের মালিকানাধীন ১৭ শতাংশ বাড়ির জায়গা কয়েক টুকরো হয়ে যাবে। আমার বসতঘর ভাঙ্গতে হবে । রাস্তা সোজা করতে না পেরে ইউপি মেম্বর বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে মসজিদ সংলগ্ন ৫০ পরিবারের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে মসজিদে যেতে পারছে না। মানুষের যাতায়াতের সরকারি পথ বন্ধ করার কারো এখতিয়ার নেই। রাস্তাটি খুলে দেওয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ব্যাপারে আমরা কোন হুমকি ধামকি দিচ্ছিনা দাবি করে মোঃ এনামুল হক মোল্লা বলেন, আমাদের বংশ প্রভাবশালী নয় বরং মেম্বারের বংশের লোকজন সংখ্যায় বেশি তারাই প্রভাবশালী। আমরা বাক বিতন্ডা করলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবিনতি হবে পারে। এই আশংকায় নিরব ভূমিকা পালন করছি। মসজিদের পক্ষ থেকে ওজুখানা করার পরও রাস্তা ১০ ফুট প্রশস্তই থাকবে। এতে মেম্বারের বংশের লোকজনের চলাচলে অসুবিধা হবে না। তারা এটি নিয়ে দুষ্টুমি করছে।

পারইহাটি গ্রামের মোঃ অলিউর রহমান মোল্লা বলেন, যতদুর জেনেছি, মসজিদে যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২টি বংশের জায়গা দিয়ে এ রাস্তা নির্মিত হয়। মেম্বারের শরীকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাস্তা হয়নি। এ কারণে রাস্তা নির্মাণের এক বছর পর এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।আমরা এটির সুষ্ঠু সমাধান চাই।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, এ ব্যাপারে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। রাস্তা থেকে বেড়া অপসারণ করে জনগনের যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।

(এমএস/এএস/১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)