ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


বর্তমান সময়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নামিদামি পত্রপত্রিকা কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে যে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে সেটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি।ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছেন। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও, তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেআসছে না।আর আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় কারণে অকারণে। কোনো একটি অজুহাত পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়। কখনও রোজা, কখনও ঈদ বা কখনও জাতীয় বাজেট ঘোষণার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অশুভ প্রবণতা লক্ষ করে আসছি আমাদের সেই ছোটবেলা থেকে এবং আজও সেই একই ধারা অব্যাহত আছে।

বরং বলা যায় যে সেই প্রবণতা এখন বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। আর এর অনেক কারণের মধ্যে প্রধানতম কারণ আমদানিনির্ভর ব্যবসা কুক্ষিগত হয়ে আছে গুটিকয়েক বৃহৎ ব্যবসায়ীর হাতে। আরেকটা অন্যতম কারণ দেশে খাদ্য উৎপাদন বিশেষ করে কৃষিপণ্য উৎপাদন পর্যাপ্ত বাড়লেও এর সুফল জনগণ পায় না শুধু আধুনিক স্টোরেজ সিস্টেম এবং মানসম্পন্ন বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারার কারণে।আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এমন অস্বাভাবিক, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং আকস্মিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনধারণ ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। তাদের কাছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন নতুন এক অভিশাপের নাম! এভাবে চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়বে। আর দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির কারণ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের অত্যধিক হারে মুনাফা লাভের আসক্তি, অবৈধভাবে যে কোনো পণ্যের মজুত বৃদ্ধি, খাদ্যদ্রব্য কিংবা বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল ও জ্বালানি সংকট, ন্যায়সংগত ও নির্ধারিত মূল্য নির্ধারণ না করা, বাজার তদারকিতে অনীহা ইত্যাদি। তবে এই বিষয়গুলোর সঙ্গে গ্যাস, তেল ও বিদ্যুতের সংকট কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়কে অনেকাংশে কঠিন করে তুলেছে। চলমান যুদ্ধের কারণে তেল আমদানিতে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এমনকি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে অযাচিতভাবে!

দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকলে অতি দ্রুত আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই এখনই বর্তমান নতুন সরকারকে যুগোপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে যে কাজটি করা দরকার বলে মনে হয় তা হচ্ছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থাৎ দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান যেমন টিসিবি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে দ্রব্যমূল্যের আকস্মিক পরিবর্তন ঘটানো দুষ্কৃতকারীদের মূলোৎপাটন করতে হবে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ : বিভিন্ন পর্যালোচনার মাধ্যমে দেশের ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যেসব কারণ বেরিয়ে এসেছে, তা হলো- ১. ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। সরকারও বিভিন্ন সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য এসব ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছে। ২. শিল্প মালিক, উদ্যোক্তা, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের ওপর মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ। ব্যবসায়ী এবং উৎপাদকরা চাঁদাবাজদের দেয়া চাঁদার ক্ষতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে পুষিয়ে নেন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ ভোক্তারা। ৩. আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বাভাবিকভাবেই এর মূল্য বেড়ে যায়। ৪. শুল্ক বৃদ্ধির কারণেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকির ক্ষেত্রে সরকারের অমনোযোগিতা ও ব্যর্থতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটি বিরাট কারণ। ৫. দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে বিভিন্ন সময় দায়ী করলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় খুব কমই। কারণ, অবৈধ ঘুষগ্রহণের কারণে দেশে কালোবাজারিদের উপদ্রব ক্রমেই বেড়েই চলছে। ফলে শুল্ক কমানো সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্রব্যমূল্য কমে না। অনুসন্ধানে এর নেপথ্যে আরো নানা কারণ বের করেছেন দেশি-বিদেশি বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু এ ব্যাপারে ইসলামের ভাষায় জানা একান্ত জরুরি। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের এমন সব কালজয়ী কল্যাণধর্মী সুচিন্তিত নীতিমালা ও সুদূরপ্রসারী বাজার পরিকল্পনা রয়েছে; যা বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্যস্ফীতি রোধ এবং সর্বোপরি বাজারের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা দূর করা সম্ভব। তাই বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে ইসলামের ব্যবসায়িক নীতিমালা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

কালোবাজারি ও মজুতদারির ভয়াবহতা : কালোবাজারিরা বেশি লাভের আশায় দ্রবমূল্য মজুতদারি করায় সংকট সৃষ্টি হয়। হঠাৎ দ্রব্যাদির সরবরাহ বন্ধ হওয়াতে দ্রব্যসংকট সৃষ্টি হয়। এতে কখনো কখনো দেখা দেয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি। কোথাও আবার নাশকতা চালিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ থেকে নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষের তো আয় বৃদ্ধি সম্ভব হয় না। এতে কালোবাজারিদের আয় বহুগুণে বেড়ে যায়, আর সর্বসাধারণের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই এসব কালোবাজারি দেশের আইনানুযায়ী যেমন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, তেমনি ইসলামি আইনানুযায়ীও সে অভিশপ্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা মোমিন পুরুষ ও মোমিন নারীদের তাদের কৃত কোনো অন্যায় ছাড়াই কষ্ট দেয়, নিশ্চয় তারা বহন করবে অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ।’ (সুরা আহজাব : ৫৮)।

মজুতদারি ও তাদের সঙ্গে একাত্মতা করে যারা দ্রব্যসংকট সৃষ্টি করে, তাদের জন্য ভয়ানক শাস্তি রয়েছে পরকালে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং যারা স্বর্ণ ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। সেদিন জাহান্নামের আগুনে ওগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর ওগুলো দিয়ে তাদের ললাটে, পার্শ্বদেশে এবং পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে, আর বলা হবে- এটি হচ্ছে ওটাই, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে। সুতরাং এখন নিজেদের সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ কর।’ (সুরা তওবা : ৩৪-৩৫)।

হাদিসে এসেছে, সাওবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসল (সা.) বলেন, ‘নেককাজ ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির পরিবর্তন হয় না। মানুষ তার গোনাহের কারণে তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪০২২)। মজুতদারির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। ইসলাম অধিক মুনাফার লোভে মজুতদারি নিষিদ্ধ করেছে। মা’মার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ফাজালা (রা) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘পাপাচারী ছাড়া অন্য কেউ মজুতদারি করে না।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ৪০ রাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুত রাখে, আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকে না।’

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমদানিকারক রিজিকপ্রাপ্ত হয়, আর মজুতদার হয় অভিশপ্ত।’ (সুনানে দারেমি : ২৪৩৩)। যে ব্যক্তি মুসলমানদের খাদ্যদ্রব্য ৪০ দিন পর্যন্ত মজুদ করে রাখে, আল্লাহতায়ালা তাকে কুষ্ঠরোগ ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন মর্মে হাদিসে এসেছে। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মজুতদারের ওপর আল্লাহতায়ালা, ফেরেশতাকুল ও মানবজাতির লানত। আল্লাহতায়ালা তার কী ফরজ, কী নফল কোনো ইবাদতই কবুল করেন না।’ (ফতোয়ায়ে শামি : ৬/৩৯৮)।

বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সাধারণ নীতি : ইসলাম লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এ জন্যই ইসলামি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো, জনদুর্ভোগ কমাতে বাজার দর স্থিতিশীল রাখা। বাজার দর নিয়ন্ত্রণে ইসলামের সাধারণ নীতি হলো, পণ্য উৎপাদক পণ্যের মূল্য নির্ধারণে স্বাধীনতা ভোগ করবে। সাধারণ অবস্থায় রাষ্ট্র পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবে না। কেন না, পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিলে উৎপাদক পণ্যের মান কমিয়ে দিতে পারে। তবে বাজারমূল্য যদি অস্বাভাবিক রকম হয় এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তবে ইসলাম বাজার দর নিয়ন্ত্রণের অনুমতি দিয়েছে। শায়খ তাহির বাদাভি বলেন, ‘ওপরোল্লিখিত হাদিসগুলোর মাধ্যমে নবীজি (সা.) ঘোষণা দিচ্ছেন, বিনা প্রয়োজনে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা জুলুম। রাসুল (সা.) জুলুমের দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পছন্দ করেন।

কিন্তু বাজারে যখন অস্বাভাবিক লেনদেন-কারবার অনুপ্রবেশ করবে, যেমন- কিছু ব্যবসায়ীর পণ্য মজুতকরণ এবং তাদের মূল্য কারসাজি, তখন কতক ব্যক্তির স্বাধীনতার ওপর সামষ্টিক স্বার্থ প্রাধান্য লাভ করবে। এ অবস্থায় সমাজের প্রয়োজনীয়তা বা চাহিদা পূরণার্থে এবং লোভী সুবিধাভোগীদের থেকে সমাজকে রক্ষাকল্পে মূল্য নির্ধারণ করা জায়েজ। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না দেয়ার জন্য এ নীতি স্বতঃসিদ্ধ।’ (নিজামুল ইকতিসাদি ফিল ইসলাম : ৭৮)। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘মূল্য নির্ধারণ ছাড়া যদি মানুষের কল্যাণ পরিপূর্ণতা লাভ না করে, তাহলে শাসক তাদের জন্য ন্যায়সংগত মূল্য নির্ধারণ করবেন। কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বা কারো প্রতি অন্যায় করা যাবে না। আর মূল্য নির্ধারণ ছাড়াই যদি তাদের প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায় এবং কল্যাণ সাধিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান মূল্য নির্ধারণ করবেন না।’ (কিতাবুল মাজমু : ১২/১২১)।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে করণীয় : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে মোমিনরা নানাভাবে তা প্রতিহত করতে পারে। যেমন-

১. মূল্য নির্ধারণ : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে রাষ্ট্র নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। আনাস (রা.) বলেন, লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি আমাদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দিন।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ দ্রব্যমূল্যের গতি নির্ধারণকারী, তিনিই একমাত্র সংকীর্ণতা ও প্রশস্ততা আনয়নকারী এবং তিনি জীবিকা দানকারী।

আমি আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করতে চাই, যেন তোমাদের কেউ আমার বিরুদ্ধে তার জানমালের ব্যাপারে জুলুমের অভিযোগ উত্থাপন করতে না পার।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৩৪৫১)।

২. বর্ধিত মূল্যের পণ্য বর্জন : ব্যবসায়ীদের অন্যায় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাজ বর্ধিত মূল্যের পণ্য বর্জন করতে পারে। কেন না, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে গোশতের মূল্যবৃদ্ধি পেলে লোকেরা তার কাছে অভিযোগ করে তার মূল্য নির্ধারণের দাবি জানায়। তিনি বলেন, ‘তোমরাই এর মূল্য হ্রাস করে দাও। তাদের কাছ থেকে গোশত কেনা ছেড়ে দাও।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৯/১৪১)।

৩. ক্রয়-বিক্রয়ে সহজতা : এমন কঠিন সময়ে ব্যবসায়ীদের ক্রয়-বিক্রয়ে সহজতা অবলম্বন করা উচিত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ এমন একজন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যে ক্রেতা-বিক্রেতা, বিচারক ও বিচারপ্রার্থী অবস্থায় সহজতা অবলম্বনকারী ছিল।’ (সুনানে নাসায়ি : ৪৬৯৬)। ইসলামের দৃষ্টিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক প্রকার শাস্তি। তাই দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে পাপ পরিহার করা এবং তওবা করে ফিরে আসা আবশ্যক।

পরিশেষে বলতে চাই, অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে অবৈধভাবে অধিকহারে পণ্য মজুত করতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি আমদানি নির্ভরশীলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। পচনশীল খাদ্যপণ্যের যথাযথ সংরক্ষণের জন্য উপজেলাভিত্তিক হিমাগার স্থাপন করতে হবে। দেশে সংরক্ষণের অভাবে বছরে ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়। ফলে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাপ কমাতে এটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। অপচয় রোধ করার পাশাপাশি সরকার প্রধানের নির্দেশনা মোতাবেক এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। মূলত আমরা যদি আমাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন সচেষ্ট হই, তবে একদিকে যেমন আমদানির প্রবণতা কমে আসবে, ঠিক তেমনি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের অসৎ উদ্দেশ্যও নস্যাৎ হবে। মনে রাখতে হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণের সামগ্রিক বিষয় আমাদের হাতে থাকে না বটে, কিন্তু আমরা যদি সচেতন হই, তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিম্নগামী হতে বাধ্য। তবে এসব বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।তাইআন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। তবে সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী কর কমাতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের হাতে যেসব উপকরণ রয়েছে তা সদ্ব্যবহারের এখনই উপযুক্ত সময়।'

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।