সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ মশার কয়েল কারখানা। উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে মশার কয়েল তৈরি করছে অবৈধ কয়েল তৈরীর কারখানাগুলো। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ও নামকাওয়াস্তে প্রায় শতাধিক কয়েল কারখানা গড়ে উঠেছে। তারা ক্ষতিকর মাত্রায় রাসায়নিক প্রয়োগ করে কয়েল উৎপাদন করে। অসতর্কতার কারণে ঘটছে নানান অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা। কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে এসব প্রতিষ্ঠান যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠায় বিপাকে রয়েছে বৈধ কারখানা মালিকরা। এ বিষয়ে কারখানা মালিকদের দাবী বৈধ একটি লাইসেন্স দিয়ে একই মালিক বেশ কয়েকটি কারখানা চালায়। সেখানেই তৈরী করা হয় অবৈধ কয়েল। ফলে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো চালাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

ভৈরব শহরের আশপাশের এলাকায় অনুমোদনহীন কয়েল তৈরীর প্রায় শতাধিক কারখানা রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, মশা মারার জন্য নয় বরং মশা তাড়াতে কয়েল উৎপাদন ও ব্যবহারের কথা রয়েছে। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে অবৈধ কয়েল প্রস্তুতকারীরা। উচ্চমাত্রার রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে নিমিষে মশা মরে যাওয়ায় অসচেতন ক্রেতা ওই কয়েল ব্যবহার করছেন। আর বেশি লাভের আশায় খুচরা বিক্রেতারাও এসব কয়েল দোকানে বিক্রি করছেন। এতে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিকের ফলে তেলাপোকা আর টিকটিকিও মরে যায়।

জানা যায়, ভৈরবে শতাধিক কয়েল কারখানার মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ২০/২৫টি কয়েল কারখানার। ভৈরব পৌর শহরের জগন্নাথপুর, তাতারকান্দি, স্টেডিয়াম পাড়াসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় রয়েছে এসব অবৈধ কারখানার বিচরণ। তবে ভৈরব বস কয়েল ফ্যাক্টরির মালিক ফজলুর রহমান এক লাইসেন্স ব্যবহার করে একাধিক কয়েল কারখানা চালাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। দুইদিন যেতে না যেতে তার কারখানায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এতে করে পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।
এদিকে কারখানা মালিকদের দাবী সকল নিয়ম কানুন মেনে পরিচালনা করছেন প্রতিষ্ঠানগুলো। তাছাড়া বৈধ লাইসেন্সের জন্য সকল প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র করতে যেন সহজ ভাবে করা যায় সরকারের সেই সহযোগীতা কামনা করেন। তাহলে সরকারের রাজস্ব আর ফাঁকি দেয়া হবে না। তারাও বৈধ ভাবে ব্যবসা করতে পরবো।

ভৈরবের বিভিন্ন কারখানায় ঘুরে দেখা যায় দেদারছে তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন ব্যান্ডের কয়েল। কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের কারোরই মুখে মাস্ক বা হাতে পেটেকশন গ্লাব্স নেই। যে যারমত করে কাজ করে যাচ্ছেন।

এসময় তাদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানায় কোন ক্যামেরা বা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা নিষেধ করে রেখেছেন মালিক পক্ষ।

এ বিষয়ে কথা বলতে বস কয়েল ফ্যাক্টরির মালিক ফজলুর রহমানকে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ফোনটি কেটে দেন। পরে আবার ফোন দিলে বলেন, কারখানায় আগুন লাগতেই পারে। বারবার কেন আগুন লাগে তা জানেন না। এক লাইসেন্সে কয়টি কারখানা চালান প্রশ্ন করতেই তিনি ফোনটি কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কলটি রিসিভ করেন নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মসকিউটু কয়েল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিশনের ভৈরব শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সোহাগ বলেন, ভৈরবে ৮০টি কারখানার মধ্যে প্রায় ৩০টি কারখানার কাগজপত্র রয়েছে। অনেকগুলো অবৈধ কারখান বৈধ করতে কাগজের জন্য জমা দেয়া আছে। আমি চাই প্রশাসন অবৈধ কারখানাগুলো যেন বন্ধ করে দেয়। আর যদি সম্ভব হয় প্রশাসনের সহযোগীতায় সবাইকে লাইসেন্সের আওতায় আনা হোক।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য প. প. কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, উচ্চমাত্রার রাসায়নিক ব্যবহারের হাপানি, শ্বাসকষ্টের মতো কঠিন রোগ হয়। আবাসিক এরিয়া গুলো থেকে কারখানা গুলো সরিয়ে নিতে পারলে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে যাবে। কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়ম মেনে কাজ করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

ভৈরব নদী ফায়ার স্টেশন মাস্টার আজিজুল হক রাজন বলেন, ভৈরব বেশির ভাগ কয়েল কারখানায় প্রয়োজনীয় কাগপত্রসহ যে কোন দুর্ঘটনা মোকাবেলার সরঞ্জাম নেয়। কারখানা পরিচালনা প্রয়োজনীয় কোন কিছুই নেয়। এমনকি যাতায়াত ব্যবস্থায় ভাল নেই কারাখানাগুলোর পাশে।

উপজেলার নির্বাহী অফিসার একেএম গোলাম মুর্শেদ খান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা যেন আবাসিক এলাকায় লাইসেন্স না দেয়। এদিকে অবৈধ কারখানা গুলোতে অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

(এসএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪)