রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ভবন সংস্কার ও উন্নয়নের নামে প্রকল্প গ্রহণ করে বরাদ্দকৃত সরকারি এক লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য দৈনিক যশোর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সেলিম রেজা মুকুল, সাহিত্য সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শহীদুল ইসলামসহ (ভাটা) পাঁচজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক নোটিশে ওই টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরৎ প্রদান করে চালানের কপি নিরীক্ষা দলের নিকট পাঠানোর জন্য সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ইয়ারুল হক এর কাছে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

প্রকল্পের অন্য সদস্যরা হলেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সদস্য সুপ্রভাত সাতক্ষীরা পত্রিকার নূর মনোয়র হোসেন, সাতনদী পত্রিকার আইয়ুব হোসেন রানা ও বিটিভির’ সাতক্ষীরা প্রতিনিধির ক্যামেরাপার্সন মীর মোঃ মোস্তফা আলী।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ইয়ারুল হক জানান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ভবন সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ চেয়ে গত বছরের ২০ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য সেলিম রেজা মুকুল। ওইদিন প্রেসক্লাবে এ সংক্রান্ত এক সভায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাতনদী পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এক রেজুলেশনে কমিটি নির্বাচন করা হয়। আহবায়ক হিসেবে কৃষকলীগ নেতা সাংবাদিক সেলিম রেজা মুকুল, সদস্য সচীব হিসেবে কৃষকলীগ নেতা সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম (ভাটা), সদস্য হিসেবে নূর মনোয়র হোসেন, বিটিভি’র ক্যামরা পার্সন মীর মেস্তফা আলী ও আইয়ুব হোসেন রানার নাম থাকা রেজুলেশন সত্যায়িত করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান।

প্রকল্পের অনুকুলে একটি এফিডেফিড দাখিল করা হয়। তাতে পাঁচজনের সাক্ষর দেখানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত বছরের ২১ জুন ইউনিয়ন ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখার এক লাখ টাকার একটি চেক দেওয়া হয়। ২২/২৩ অর্থ বছরে ওই সংস্কারের কাজ শেষ করার কথা। যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আভ্যন্তরীন অডিট নিরীক্ষা দল সরেজমিন পরিদর্শণে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিষয়টি সেলিম রেজা মুকুলসহ সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হয়। তারা প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন প্রকার কাগজপত্র জমা না দিতে পারায় ওই টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরৎ দিয়ে চালানের কপি নিরীক্ষা দলের কাছে পাঠানোর জন্য গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটির আহবায়কের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরো জানান, টাকা ফেরৎ দেওয়ার নোটিশ পেয়ে সাংবাদিক সেলিম রেজা মুকুল ও শহীদুল ইসলাম (ভাটা) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বারান্দায় থাকা মজুতকৃত কাঠের ভিডিও তার হোয়াটসআপে পাঠিয়ে ওই টাকা দিয়ে কাঠ কেনা হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে নোটিশ পাঠানোর ২৮ দিনের মধ্যে টাকা ফেরৎ না দিলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আবারো নির্দেশনা আসার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবশেষে ওই কমিটির বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হতে পারে।

এদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কয়েকজন বর্ষীয়ান সদস্য জানান, সাবেক এক সাংসদের সান্নিধ্যে এসে সাংবাদিক হাবিবুর রহমান নিয়ম বহির্ভুতভাবে প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বনে যান। এ সময় বার্ষিক বনভোজন শেষে উদ্বৃত্ত থাকা টাকা দিয়ে কেনা কাঠের ভিডিও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দেখিয়ে বাঁচতে চাইছেন সেলিম রেজা মুকুল ও শহীদুল ইসলামসহ কমিটির পাঁচ সদস্য। এ টাকা লুটপাটের সঙ্গে হাবিবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা কতদূর তা খতিয়ে দেখতে হবে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাহিত্য সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম জানান, ওই টাকা দিয়ে তারা কাঠ কিনেছিলেন। খোদার কসম হাবিবুর রহমানসহ তারা ছয়জন ১০ টাকাও খাননি।

তবে ওই প্রকল্পের সাধারণ সদস্য মীর মোস্তফা আলী বলেন, এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪)