স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : ছেলের কাফন পড়ানো শেষ। খাঁটিয়া ধরে মায়ের গগন বিদায়ী চিৎকার। সাদা কাফনে মোড়ানো নিথর দেহ। পশ্চিম দিকে কাঁত করা মুখের উপরে মা মমতার পরশে শেষ বিদায় জানাচ্ছেন। দোয়া পাঠের সাথে সাথে মায়ের কান্না দেখে কাঁদছেন অন্য স্বজনরাও। মা বলছেন, আমার সোনার সাথে আমার জান্নাতে দেখা হবে। প্রিয় ছোট ভাইটা সংবাদকর্মীদের বলছেন ভাইয়ের সাথে বলা শেষ কথা। হঠাৎ সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে, তাই বাবা শোকে দিশেহারা অবস্থা।

ঘটনার বর্ণনা করছিলাম যশোর সদরের ধোপাখোলা গ্রাম থেকে। এই গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে কামরুল হাবিব হোসেন রকি (২১) এর কথা। ঢাকা বেইলি রোডে কাঁচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন রকি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কাজের জন্য ঢাকাতে গিয়েছিলেন তিনি। গতকাল রাতে আগুনে পুড়ে গেছে তার কর্মরত প্রতিষ্ঠান। রকি সেখানে ছয় তলাতে আটকা পড়ে মারা গেছেন। সকালে ঢাকা থেকে লাশ গ্রামের বাড়িতে এসেছে। রকির শরীরে আগুনে পোড়ার কোনো চিহ্ন নেই। অক্সিজেন সংকটে তার মৃত্যু হয়েছে। গ্রামে পারিবারিক ভাবে তার লাশ দাফন করা হচ্ছে। এলাকা জুড়ে শোকের মাতম বিরাজ করছে।

নিহত রকির পরিবারের একাধিক সদস্য সুত্রে জানা গেছে, সে আলিম পাশের পর কাজের সন্ধানে ঢাকায় যায়। বেইলি রোডের কাঁচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কর্মরত ছিলেন। গতকাল রাত অনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে বাসায় ফোন করে জানায় তার রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে। রকির মামা কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ছুঁটে যায় ভাগনেকে বাঁচানোর জন্য। আহত রকিকে প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে খবর পেয়ে রকির মা ছেলেকে উদ্ধার কর্মীদের সাথে যোগাযোগের কথা বলেন। মমতাময়ী মা জায়নামাজে দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য দোয়া করতে থাকেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস শেষমেশ রকিকে উদ্ধার করা গেলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি।

(এসএ/এসপি/মার্চ ০১, ২০২৪)