শেখ ইমন, শৈলকুপা : নিজেই করেন সিজারিয়ান অপারেশন, দেন অ্যানেসথেসিয়া, দেখেন রোগী। পরিচয় দেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, কখনও সিলেট মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার। বিভিন্ন ক্লিনিকে ব্যবহার করেন ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়। রোগীদের বিশ্বাস অর্জন করতে প্রেসক্রিপশন প্যাডে লেখেন বড় বড় সব ডিগ্রি। এই চিকিৎসকের নাম কাশমিম সুজন। তবে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছে,এই নামে কোন চিকিৎসক তাদের হাসপাতালে নেই। এদিকে ঘটনার সত্যতা পেয়ে সম্প্রতি জেলা সিভিল সার্জন এই চিকিৎসককে মৌখিকভাবে অপারেশন করতে মানা করলেও তা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

কাশমিম সুজনের বাড়ি ঝিনাইদহ শহরে। তবে বিভিন্ন বিতর্কিত কমকান্ডের জন্য ঝিনাইদহ শহর ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এরপর চলে আসেন শৈলকুপায়। নানা পরিচয়ে করতে থাকেন বিভিন্ন ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন, নিজেই দেন অ্যানেসথেসিয়া(অজ্ঞান) ও রোগী দেখা। প্রকৃতপক্ষে তিনি কোন হাসপাতালের ডাক্তার এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এভাবেই দীঘদিন ধরে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে এই কাশমিম সুজন। ভ’য়া পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে রোগীকে নিজেই অজ্ঞান দিয়ে অপারেশন করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটের একটি বে-সরকারী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা কাশমিম সুজন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে শৈলকুপার বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন ও রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

তার প্রেসক্রিপশন প্যাডে চোখ বুলালে দেখা যায়, কাশমিম সুজন, এমবিবিএস সিএম ইউ(আলট্রা) পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস) পিজিটি (এ্যানেসথেসিয়া এন্ড আইসি ইউ) মেডিকেল অফিসার গাইনী এন্ড অবস,কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া। তবে এই নামে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোন মেডিকেল অফিসার নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার গদাইডাঙ্গা গ্রামের এক রোগী বলেন, ‘কাশমিম সুজনের কাছে আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখালে তিনি তৎক্ষনাৎ অপারেশন করতে হবে বলে জানান। নিজেকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রফেসর পরিচয়ে অপারেশন করেন।’

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার পরিচয় দেওয়া ডাক্তার কাশমিন সুজনের বক্তব্য নিতে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস সরকার বলেন, ‘কাশমিম সুজন নামে কোন ডাক্তার এখানে কর্মরত নেই।’

ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন শুভ্রা রাণী বলেন, ‘কাশমীম সুজন সরকারী হাসপাতালে চাকরী-ই পাননি। বিভিন্ন পরিচয়ে ক্লিনিকগুলোতে নিজেই অপারেশন করেন ও অ্যানেসথেসিয়া দেন। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি, যারা ভ’য়া পরিচয়ে অপারেশন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’

(এসআই/এসপি/মার্চ ০২, ২০২৪)