ফয়জুল মুনির, পটুয়াখালী : পটুয়াখালী কলাতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় মীম আক্তার (১৯) নামের এক নারী তার স্বামী রাকিবকে (৩০) কুপিয়ে হত্যার পর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। খুনি মীম এখন পুলিশ হেফাজতে এবং রাকিবের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে আছে। গত শুক্রবার রাতে থানায় গিয়ে রাকিবের স্ত্রী মীম পুলিশকে জানায়, প্রেমের বিয়ের পর স্বামীর বেকারত্বে দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক অশান্তি, সারাক্ষণ মারপিট, ঘনঘন বাবার বাড়ী পাঠিয়ে সেখানে গিয়েও নির্যাতন, শশুড় বাড়ীর লোকজন সুরক্ষা না দেয়ায় সে অতিষ্ঠ হয়ে বটি দিয়ে কুপিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।

আত্মস্বীকৃত খুনি মীম আক্তারকে পুলিশ হেফাজতে নেয়, এবং পটুয়াখালী শহরে কলাতলা-৩য় লেন, আকন বাড়ী সড়কের ভাড়া বাসা থেকে স্বামী রাকিবের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। মীম সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া গ্রামের মোঃ জুয়েলের কন্যা এবং রাকিব ভোলা লালমোহন উপজেলা ফুলবাগিচা গ্রামের মোঃ নজরুল ইসলামের পুত্র। নজরুল ইসলাম ঔষধের হকারি পেশায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে পটুয়াখালী শহরে বসবাস করেন।

স্থানীয় বিভিন্ন সুত্র, এলাকাবাসী ও রাকিবের পরিবার জানায়, মাত্র ছয় মাস আগে মীম ও রাকিবের প্রেমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর পটুয়াখালী শহরের কলাতলা-৩য় লেন, আকন বাড়ী সড়কে রাকিব বাবার ভাড়া বাসায় থাকে, এরপর থেকেই পারিবারিক কলহ শুরু হলে এক পর্যায়ে রাকিবের মা বাসা ছেড়ে অন্য ছেলের বাসায় চলে যায়। মীম রাকিবের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তির অভিযোগ আছে। মীমের এর আগেও বিয়ে হয়েছিল, তার বাবা-মাকে নিয়েও আছে নানা গুঞ্জন অভিযোগ। মীম আগের দিন ঝগড়া করে বাবার বাড়ী চলে গেলে রাকিব শুক্রবার বিকেলে মীমকে নিয়ে বাসায় ফেরে, মীম ঐ রাতেই রাকিবকে খুন করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে।

রাকিবের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি আসরের নামাজ শেষে বাসায় এসে রাকিব ও মীম বাসায় পাই,তখন আমার ছোট ছেলে বলে বড় ভাইয়ের (রাকিব) গলার মধ্যে কেমন যেন শব্দ করে এ খবর শুনে আমি মীমদের ঘরে গেলে মীম জানায় রাকিব ঘুমাচ্ছে, এ কথা শুনে ফিরে আসি। পরে আমি মাগরিবের নামাজ পরে ফিরে আসার পর ছোট ছেলে জানায়, রাকিবকে মেরে ফেলছে।

এর আগে শুক্রবার দূপুরে-ই নজরুল ইসলামের বাবা (রাকিবের দাদা) মারা যায়, নজরুল ইসলাম শনিবার মরাদেহ দাফনের জন্য ভোলা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আবার সন্ধায় ছেলে খুন। একই দিনে পিতা-পুত্রকে হারিয়ে শোকে দিশেহারা নিহতের বাবা।

পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আহমাদ মাঈনুল হাসান বলেন, হত্যার বিষয়টি আশেপাশের লোকজন টের পায়নি। খুন হওয়া ব্যক্তির ছোট ভাই ঘটনাস্থলের একটু দূরে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তিনিও টের পাননি। কেন কি কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা জানার চেষ্টা চলছে। খুনের স্বীকারোক্তি দিলেও অন্য কারনও থাকতে পারে, তাই মীমকে স্বীকারোক্তির জন্য রিমান্ডসহ নানা বিষয়ে তদন্ত চলমান।

(এফএম/এসপি/মার্চ ০২, ২০২৪)