বন্যা রানী হালদার, পাথরঘাটা : ৪ গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা নির্ভর করতো একটি মাত্র ফিল্টারের উপর এবং যা ছিল গত এক বছর যাবত পরিত্যক্ত অবস্থায়। ফলে মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে হা-হুতাস করছিলেন। ঠিক এমন সময় এগিয়ে এসেছে পাথরঘাটার  প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ (প্রাজক) ফাউন্ডেশন।

এই পানির ফিল্টারটি হচ্ছে কালনেঘা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সফিলপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায়। সফিরপুরের লেহাজ উদ্দিন হাওলাদার বাড়ির খাস পুকুরের সঙ্গে স্থাপিত গণসাস্থ্য'র এই ফিল্টারটিতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়েছিল একটি সোলার চালিত মোটরের মাধ্যমে। সৌর চালিত মোটর এবং ইনভার্টার সহ অন্যান্য ডিভাইস খুব দুর্লভ এবং অত্যধিক মূল্যবান হওয়ার কারণে নষ্ট হলে স্থানীয় গ্রামবাসী চাঁদা তুলে মেরামত করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়। ফলে গত প্রায় এক বছর যাবত অত্র এলাকার কালমেঘা ইউনিয়ন ও কাঠালতলী ইউনিয়নের প্রায় চারটি গ্রামের আশেপাশের মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। বাধ্য হয়ে তারা খাসপুকুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতেন। যা ছিল একদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অন্যদিকে পুকুরের খাড়া ঢাল বেয়ে পানি তোলায় বিপদের ঝুঁকি। অতঃপর তাদের এই কষ্ট লাগভ করতে এগিয়ে এলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ (প্রাজক) ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশন টি প্রথমে সোলার প্রযুক্তিতে চালিত পানি উত্তোলন ব্যবস্থাটি মেরামত করতে চেষ্টা করে। ব্যর্থ হলে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করে পানির নতুন লাইন টেনে বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহার করে পানির ঊত্তোলনের ব্যবস্থা করে দেয়। এটি গ্রীষ্মের সূচনায় এবং আসন্ন রমজানের প্রাক্কালে প্রখর খরার মাঝে যেন এক পশলা বহুল কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির মত।

সরেজমিনে দেখা যায় গ্রামবাসীর কাঙ্খিত ফিল্টার টি মেরামত কে কেন্দ্র করে অসংখ্য শিশু বৃদ্ধ নারী পুরুষের ভীড়। অনেকে ফিল্টারটি মেরামত হয়েছে জেনে কলস নিয়ে হাজির হয় বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করার জন্য। তাদের মধ্যে গ্রামবাসী একজন নারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে আমরা ফিল্টারটিস সংস্কারের জন্য গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে নানান ভাবে চেষ্টা করেছি এবং বিভিন্ন অফিসে গত এক বছর ধরে ছোটাছুটি করেও সুরাহা করতে ব্যর্থ হয়েছি কেউ ফিল্টারটি মেরামতে সহযোগিতা করতে পারেনি। কিন্তু আজ প্রাজক ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা এসে আমাদের এই সমস্যাটি দূর করে দিলেন। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ এবং তাদের ধন্যবাদ জানাই। ফিল্টারটি সংস্কার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন প্রাজক ফাউন্ডেশন এর সেক্রেটারি আব্দুল কাইয়ুম খান সোহাগ সহ প্রাজক ফাউন্ডেশন এর স্বেচ্ছাসেবী ও গ্রামবাসীদের একটি দল। এতে উপস্থিত ছিলেন কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের পরিষদ সদস্য জনাব তরিকুল ইসলাম পিন্টু মুন্সি। তিনি বলেন প্রাজক ফাউন্ডেশনের এ ধরনের মানবিক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

প্রাজক ফাউন্ডেশন এর সেক্রেটারি জানান, প্রাজক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা একজন প্রবাসী ব্যবসায়ী যার বাড়ি পার্শ্ববর্তী গ্রাম মুন্সিরহাটে। তিনি তার বাবার মৃত্যুর পর একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান করেন যার নাম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ ফাউন্ডেশন সংক্ষেপে প্রাজক ফাউন্ডেশন। তিনি জানান প্রাজক ফাউন্ডেশন এর উদ্দেশ্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নানাভাবে কল্যাণ সাধন করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াব অর্জন করা। যেহেতু গ্রীষ্মকাল শুরু হয়ে গেছে এবং পবিত্র রমজান মাস আসন্ন তাই এখানে কয়েক শতাধিক মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছিল এবং এটি সংস্কার করার মাধ্যমে আমরা একটি বড় সাওয়াবের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করছি। মানুষ যাতে ইফতার করে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারেন তাই আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যথা সম্ভব দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ফিল্টারটি মেরামত শেষে প্রাজক ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে গ্রামবাসীকে নিয়ে একটি উঠোন বৈঠক করা হয়। উঠুন বৈঠকে প্রাজক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গ্রামবাসীকে ফিল্টারটি যত্ন নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। উক্ত বৈঠকে ইতালির রোম থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংযুক্ত হন প্রাজক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান জনাব মোঃ ইউসুফ আলী। তিনি গ্রামবাসীকে আহ্বান জানান যেন, প্রাজক ফাউন্ডেশনের মত সবাই মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসে। গ্রামবাসী প্রতিউত্তরে তাকে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। তারা জানান যে যখনই তারা পানি পান করবেন তখনই তাদের তাঁকে মনে পড়বে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রাজক ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী সদস্য ও অন্যান্য মানবিক সংগঠনের মধ্যে দৃষ্টি মানব কল্যাণ সংস্থা, হিউম্যান হেল্প লাইন সহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যগণ।

(বি/এসপি/মার্চ ০৪, ২০২৪)