স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : নতুন বছরের প্রথম তিন মাস পুরাতন বই কেনাবেচা রমরমা চলত। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী, অভিবাবকরা পুরাতন লাইব্রেরি থেকে সুলভ মূল্যে প্রয়োজনীয় বই ক্রয় করত। গত কয়েক বছর পুরাতন বইয়ের সেই রমরমা ব্যবসা আর নেই। পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে দোকান গুলোতে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাধ্য না থাকলেও বাধ্য হয়ে ঝুঁকতে হচ্ছে নতুন বইয়ের দোকানে।

যশোর শহরের জজকোর্ট মোড়ে আসাদ গেট সংলগ্ন রাস্তার পাশে সারি সারি দেখা মেলে পুরাতন লাইব্রেরি। এখানে ছোট বড় ২৭ থেকে ২৮ টা বইয়ের দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতকসহ চাকুরি, সাহিত্য, ধর্মীয় নানা প্রকারের পুরাতন বই পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা শেষে এই সব লাইব্রেরি গুলোতে বই বিক্রি করে থাকে। এছাড়া ঢাকার নীলক্ষেত, বঙ্গবাজার থেকেও পুরাতন বই আমদানি করে এখানকার দোকানীরা। খরচ, মজুরি হিসেবে স্বল্প টাকা মুনাফায় বছরের পর বছর বই বিক্রি করে আসছেন এখানকার দোকানীরা। তবে, বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রম আসাতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই কেনা বেচা একদম কমে গেছে। যে কারণে গত বছরের তুলনায় এ সব বই বিক্রি অনেকাংশে কমে গেছে।

পুরাতন লাইব্রেরিতে বই কিনতে আসা চৌগাছার কলেজ ছাত্রী মাইসা বলেন, সে উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা ও গারস্থ্য বই কিনতে চৌগাছার পুড়োপাড়া এলাকা থেকে এসেছে। উপজেলা শহরে সাধারণত পুরাতন বইয়ের দোকান না থাকাতে জেলা শহরে আসতে হয়েছে। স্বল্পমূল্যে বই কিনতে পারাতে অর্থিকভাবে তার কিছুটা উপকার হবে।

পুরাতন বইয়ের দোকানী ইউসুফ আলী বলেন, গতবারের তুলনায় এ বছর বিক্রি একদম কম। এখন ছেলে মেয়েরা বই কিনতেই চাই না। নতুন শিক্ষা ক্রম এসে আরও বাজার পড়ে গেছে। এখন উচ্চ মাধ্যমিক বইয়ের একটু চাহিদা আছে।

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী খন্দকার রুবাইয়া বলেন, মানুষের জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্টা বহমান সেই পৃথিবীর জন্ম লগ্ন থেকেই। জ্ঞান অন্বেষণের বিরাট সংগ্রহশালা আমাদের সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের আসাদগেট সংলগ্ন পুরাতন বইয়ের লাইব্রেরি। এখান থেকে সুলভ মূল্যে বই কিনে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই বিষয়ে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার বলেন, কলেজ গেটের এই পুরাতন বইয়ের দোকান গুলো শিক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে। অনেক মেধাবি শিক্ষার্থীরা টাকার অভাবে বই, সাজেশন কিনতে পারে না। তারা খুব কম মূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় বই এই লাইব্রেরিগুলো থেকে কিনে পড়তে পারে। তাছাড়া আমাদের সেমিনার, কলেজের লাইব্রেরি থেকেও এখন সহজে শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে পড়তে পারছে। আসাদ গেট ছাড়া যশোরের আর কোথাও এত বড় পরিসরে পুরাতন বই কেনা বেচা হয় না। শিক্ষা বিস্তারে এই সব পুরাতন লাইব্রেরি গুলো সত্যি অবদান রেখে চলেছে।

(এসএ/এসপি/মার্চ ১০, ২০২৪)