সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আপন মামীকে নিয়ে ভাগ্নের পালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই দুঃখে বিষ পানের আত্মহত্যার চেষ্টা করে মামা সেলিম মিয়া। সে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের জাফরনগর ডেংহাটি গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে। তারই ভাগ্নে উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন জগমোহনপুর এলাকার মৃত আওয়াল মিয়ার ছেলে রাকিব (২২) ও মামী শ্রীনগর ইউনিয়নের জাফরনগর ওজি বাড়ির ইনু মিয়ার মেয়ে রিনা বেগম (২৭)। গত রবিবার রাতে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের জাফরনগর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ওই এলাকার ইউপি সদস্য মো. তারা মিয়া এই প্রতিনিধিকে জানান, রোববার সকালে সেলিম মিয়া তার স্ত্রী রিনা বেগম ও তার আপন ভাইগ্না রাকিব মিয়ার পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দেয় আমার কাছে। পরে দুপুরে আমি সেলিম মিয়াকে সাথে নিয়ে তার স্ত্রীর খোঁজে ভাগ্নে রাকিবের বাড়িতে যায়। ওই সময় আমি রাকিব ও রিনার সাথে কথা বলে জানতে পারি রিনা বেগম সেলিমের সাথে সংসার করবে না। এসময় রিনা বেগম তার স্বামীকে ওই বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। তখনই সাথে সাথে আমরা বাড়িতে চলে আসি। এদিকে বাড়ি ফিরে সেলিম মিয়া স্ত্রী ফিরে না আসায় কষ্টে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৫ বছর আগে পারিবারিক ভাবে সেলিম মিয়ার সাথে পাশ্ববর্তী গ্রামের রিনা বেগমের বিয়ে হয়। পরিবার নিয়ে সেলিম মিয়া দীর্ঘদিন যাবত ঢাকায় বসবাস করছিলেন। তিনি ঢাকা হাইকোর্ট এলাকায় ঝালমুড়ি ও চা বিক্রি করতেন। সেখানে তার একাধিক দোকান রয়েছে। তাদের সংসারে দীর্ঘদিন কোন ছেলে মেয়ে ছিল না। মীম নামে পালিত একটি কন্যা সন্তানকে সাড়ে তিন বছর যাবত লালন পালন করছে। গত তিন মাস আগে তাদের সংসারে রামিমা নামের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

বছর খানেক আগে ভাগ্নে রাকিবকে মামা সেলিম মিয়া ব্যবসায় সহযোগিতা করার জন্য ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা একসাথেই বসবাস করতো। সেই সুবাদে মামী রিনার সাথে রাকিবের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর মাঝে টের পায় তার স্বামী। কিন্তু লোক লজ্জার ভয়ে স্বামী সেলিম মিয়ার ভাগ্নের সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্কের কথা জানতে পেরেও সন্তানের কথা ভেবে সবকিছু মেনে নেয়। তখন তার স্ত্রী ভালো হয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তখন বেশ কদিন ভালোই চলছিলো। কিছু দিন পর হঠাৎ করে আবার ভাগ্নের সাথে তার স্ত্রী বাসা থেকে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলেন, মামী ভাগ্নের সম্পর্কটি আমাদের সমাজে একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। আপন ভাগ্নের সাথে সেলিম মিয়ার স্ত্রী পালিয়ে গিয়েছে। এটি সামাজিক অবক্ষয়।

এ বিষয়ে রাকিবের বড় ভাবী তানিয়া আক্তার বলেন, গত ১৭ দিন আগে আমার দেবর রাকিব তার মামীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ১০ মার্চ রোববার তারা সকালে আমাদের বাড়িতে আসে। পরে আমরা জানতে পারি মামীকে রাকিব বিয়ে করেছে। এদিকে রাকিবের মামা তার স্ত্রীকে নিতে এসেছিল কিন্তু রিনা বেগম তার সংসার করবেনা বলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বিকালের পর থেকে রাকিব, রিনা ও আমার শাশুরী বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আমার সাথে তাদের আর কোন যোগাযোগ হয়নি।

রিনার মা রিজিয়া বেগম বলেন, সেলিম আমার আপন বোনের ছেলে। সেলিমের কাছে আমি আমার মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। আমি চাই আমার মেয়ে সেলিমের সংসার করুক। আমি গ্রামের ৫ জনকে সাথে নিয়ে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমি তার অন্য কোন সংসার মেনে নিবো না।

এ বিষয়ে স্বামী সেলিম মিয়া জানান, আমি নিজের সন্তানের মত রাকিবকে আদর করতাম। সে আমার স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমি বিভিন্ন কবিরাজকেও জিজ্ঞাসা করেছি তারা বলেছে রাকিব আমার স্ত্রীকে তাবিজ টুনা করেছে। আমার তিন মাসের সন্তানকে রাকিব নিজের সন্তান দাবী করে। আমি এ বিষয় জেনেও চুপ থেকেছি। আমার স্ত্রী রিনাও আমাকে বলেছে রাকিব তাকে ফাঁসিয়েছে। ১৭ দিন আগে রাকিব আমার দুই বাচ্চাসহ রিনাকে নিয়ে পালিয়েছে। ৭ মার্চ আমি নারায়নগঞ্জ থেকে তাদের খোঁজে বের করে নিয়ে আসি। তারপর গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে আসার পর স্ত্রী ও ভাগ্নে আমার সাথে চিৎকার চেচামেচি করলে তখন স্থানীয়দের সহযোগিতায় স্ত্রী আমার কাছ থেকে রাকিবের বাড়িতে চলে যায়। তারপর আমার বউকে ফিরিয়ে আনতে গেলে সে আমার সংসার করবে না বলে জানায়। রাকিব আমার সংসারটা ভেঙ্গে দিল। আমি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমার ফুটফুটে দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমি রিনাকে না পেলে বাচঁবো না। আমি একবার ২০টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মরতে চেয়েছিলাম। আজ বিষ খেয়েছি আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি রাকিবের বিচার চাই।

এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।

(এসএস/এসপি/মার্চ ১১, ২০২৪)