রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামের কলেজ ছাত্র মাসুদ হোসেন হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৫ম আদালত। মামলা করায় প্রভাবশালী আসামিদের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতার কারণে গ্রাম ছেড়ে শহরতলীতে বসবাস করছেন বাদি ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ সুযোগে আসামিদের সহযোগিতায় একটি মহল কৌশলে বাদির জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।

কালিগঞ্জের বন্দকাটি গ্রামের মৃত আনছারউদ্দিনের ছেলে ও গণফোরামের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম হোসেন জানান, উপজেলার বন্দকাটি, কালিকাপুর, চান্দুলিয়া ও গোবরাখালি মৌজায় তার বাবার প্রায় একশত বিঘা জমি ছিল। এ জমি বিভিন্ন সময়ে তার নিজের, বড় ভাই, মোয়াজ্জেম, মোকাররম ছাড়াও দুই বোনের নামে হস্তান্তর হয়েছে। সুসম বন্টন না হওয়ায় ওই জমি নিয়ে আটজন ফুফু, ছাড়াও তিন ভাই ও দুই বোনের পৃথক দুটি দেওয়ানী মামলা চলমান রয়েছে। ২০০৮ সালে তার বাবার লিখে দেওয়া বন্দকাটি মৌজার চার একর আট শতক জমি নিয়ে বাবাকে দিয়ে জালিয়াতির মামলা করান আব্দুল আজিজসহ তিন ভাই ও দুই বোন। দলিলে সাক্ষর তার (আনছারউদ্দিন) স্বীকার করায় আদালত মামলা খারিজ করে দেন বিচারক। পরবর্তীতে তিন ভাই ও দুই বোনের পক্ষ থেকে কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে মামলা করলে তা খারিজ হয়ে গেলে বাদিপক্ষ আপিল করেছে।

বর্তমানে ওই মামলা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি তার তিন ভাই ও দুই বোন তার (মোনায়েম) মাছের ঘেরের ২৫ বিঘা জমি রঘুনাথপুর গ্রামের লোকমান সরদার, বন্দকাটি গ্রামের নুরুলসহ একটি প্রভাবশালী গ্রুপকে নিয়ম বহির্ভুতভাবে ইজারা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের পহেলা মে তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে মাসুদ হোসেনকে বাড়ির পুকুর পাড়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে পরদিন লিয়াকত সরদার, তার ছেলে বিডিআর কর্মকর্তা, তিন ভাই, তিন ভাইয়ের স্ত্রীসহ ১৩ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় গ্রাম ছেড়ে শহরতলীর বাঁকাল এলাকায় চলে আসেন।

সর্বশেষ এ মামলায় অপরাধ, তদন্ত ও গোয়েন্দা শাখা বিডিআর কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে এজাহারভুক্ত ১২ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে আসামীরা আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েন। তবে এ মামলায় দকাটি গ্রামের মাহামুদুল হাসান মন্টু তার পোল্ট্রি ফার্মের ঘরসহ ২২ শতক বাস্তুভিটা দখল করে নেন। একইভাবে বন্দকাটি মৌজায় খালেকসহ কয়েকজনের কাছে বিক্রি করা তার পাঁচ বিঘা জমি লীজ দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ শ্রীপুর এলাকার একই কার্ডে দৈনিক আজকের সারাদেশ, দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা, দৈনিক সংবাদ প্রতিক্ষণ, দৈনিক জনপদ সংবাদ, ধনাগোদা বার্তা, দৈনিক নিউজ টোয়েন্টিফোর শ্যামনগরের নিজস্ব প্রতিনিধি ও ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস এর সাংগঠণিক সম্পাদক পরিচয়বহনকারি শিমুল হোসেন, মুকুন্দ মধুসুধনপুরের তাপস ঘোষ, আনারুল ও গিয়াসউদ্দিনের নামে। জমিতে মাছ ছাড়তে আপত্তি করায় এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করায় তিনি আদালতে মামলা করেছেন। মামলা করায় শিমুল ও তাপসসহ তাদের সহযোগীরা তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যাচার করে চলেছেন। প্রতিবাদ করায় বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হক সরদারের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী করা ছাড়াও মোবাইল ফোনের আংশিক কথোপকথন ফেইসবুকে তুলে দিয়ে সম্মানহানি ঘটচ্ছেন শিমুল হোসেন। সম্মানহানির ঘটনায় শ্রীধরকাটি গ্রামের শেখ ছিদ্দিকুর রহমান সম্প্রতি মানিসুটের মামলা করেছেন দেওয়ানী আদালতে।

বন্দকাটি গ্রামের আব্দুল খালেক, জয়পত্রকাটি গ্রামের নুরুল হকসহ স্থানীয়রা জানান, শিমুল ও তাপসসহ একটি মহল লাইফ প্রোগ্রামের নামে, জুয়ার বোর্ড পরিচালনার নামে, জমিতে মাটি ভরাট করতে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে টাকা আদায় করে থাকেন। পাওনা টাকা ও বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে শালিস না করার জন্য পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দশনা থাকলেও পিঠ বাঁচাতে তারা উপজেলার শীর্ষপর্যায়ের এক জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতার কাছের লোক বলে পরিচয় দিয়ে এক উপপরিদর্শককে দিয়ে অন্যায়ভাবে জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিমুল ও তাপস। ফলে ওই দুই ব্যক্তির কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে বন্দকাটি গ্রামের আব্দুল আজিজের সঙ্গে শনিবার কয়েক দফায় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

দক্ষিণ শ্রীপুরের শিমুল হোসেন বলেন, তিনি অতীতে ছয়টি পত্রিকার প্রতিনিধি ও আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংগঠনের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাংগঠণিক সম্পাদক হিসেবে কার্ড ছাপিয়েছিলেন। মোবাইল নাম্বার চাওয়ায় ওই কার্ডের একটি আব্দুল খালেককে দিয়েছিলেন।

তিনি কোন চাঁদাবাজি ও নিয়মবহির্ভুতভাবে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তারা বিঘাপ্রতি বাৎসরিক আট হাজার টাকায় আব্দুল আজিজ ও তার ভাই-বোনদের কাছ থেকে পাঁচ বিঘা জমি লীজ নিয়েছেন। কিন্তু মোনায়েম তাদের মাছ চাষে বাধা দিচ্ছেন। থানার মাধ্যমে জমির মালিকানা নির্ধারণ করার বিষয়টি সিদ্ধান্ত হলেও মোনায়েম আসছেন না।

(আরকে/এসপি/মার্চ ১৬, ২০২৪)