রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা  সদরে প্রায় ৩০ বছর ধরে ফেলে রাখা খোলপেটুয়া নদীর ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাণ্ড দেখে হয়রান জমির মালিকরা। নদী সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ নির্মাণ না করে ২০/২০০ মিটার দুর থেকে অন্যের চিংড়ি ঘেরের বেড়িবাঁধটিকে পাউবোর বাঁধ হিসেবে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ জমির মালিকবৃন্দ।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়া গ্রামের মধ্যবর্ত্তী স্লুইসগেট সংলগ্ন এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্লাবিত হয়ে যায়। এর কয়েক মাস পর প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি জুড়ে রিং বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি আটকানো হয়। এরপর থেকে প্রায় দশ বছর যাবত বলাবাড়িয়া গ্রামে যাতায়াতের জন্য খেয়া ঘাটের নৌকাই সম্বল ছিল।

২০০৬ সালে খুলনার জনৈক ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বাহার রিং বাঁধের মধ্যে থাকা ওই দেড় হাজার বিঘা জমিতে এক বছর ফ্রী মাছ চাষ করবেন বলে দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৬৫০ মিটার বাঁধ দিয়ে ভেতরে মাছ চাষ শুরু করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি ওই ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের লোকজন বাহার সাহেবের চিংড়ি ঘেরের বেড়িবাঁধ দিয়েই যাতায়াত করে থাকেন। এরপর থেকে সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুলি, আম্ফান, ইয়াস সহ যতবার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে ততবারই বাহার সাহেবের চিংড়ি ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি সদর বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

প্রত্যেক বারই ওই ঘের মালিকরা তাদের বাঁধটি সংস্কার করেন। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি পয়সাও খরচ করেনি। তবে আম্ফান পরবর্তী সময়ে উপজেলা পরিষদ থেকে এই বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ৪ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। দুর্যোগ এর সময় এ বাঁধের জন্য কিছু চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন আমাদের কোন বাজেট নেই। এই ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি উপজেলা সদরে যোগাযোগের সরকারি রাস্তার ব্যবস্থা করতে দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা পত্রিকাসহ স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হলে টনক নড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সর্বশেষ তাঁরা ওই ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু নদী সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ নির্মাণ না করে উক্ত চিংড়ি ঘেরের কলগৈ (স্লুইসগেট) বাঁচাতে নদী থেকে কোথাও ২০ মিটার কোথাও ২০০ মিটার বাদ দিয়ে একটি পরিবারকে (পঞ্চানন মণ্ডল) বেড়িবাঁধের বাইরে রেখে কাজ করার পরিকল্পনা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি বেড়িবাঁধের নকশা প্রণয়নের সময় সংশ্লিষ্ট জমির মালিকের সাথে কোন কথা না বলে তাদের সুবিধা মতো রেকর্ডীয় সম্পত্তির উপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

কাজ শুরু হলেও এর বরাদ্দ কত, কিভাবে কতদূর কাজ হবে, কোন ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান কাজ করবেন কেউ জানে না কারণ কাজের সাইটে কোন সাইনবোর্ড নেই।

জমির মালিকের পক্ষে তারাপদ মণ্ডল, গোবিন্দ মণ্ডল, অতুল প্রসাদ রায়, বিভূতি ভূষণ রায়, পিয়াস মণ্ডল, পঞ্চানন মণ্ডল নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধের নির্মাণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন। এতে পঞ্চানন মণ্ডলের বসতভিটা কান্ট্রি সাইটে থাকবে। সাথে সাথে সংশ্লিষ্টদের চাষাবাদের ২০ বিঘা জমি থাকবে। আবার কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে স্থানীয় লোকজন বাঁধের জন্য জমি দিতে চাচ্ছেন না। বাঁধ সংলগ্ন প্রায় ১০০ মিটার এলাকা জুড়ে ৩ একর জমির ইজারা প্রাপ্ত আশাশুনি সদরের শফিকুল সাংবাদিকদের জানান আমি বাঁধের জন্য জমি দেবো না বলিনি। বরং নদী সংলগ্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে আমি সহ এলাকাবাসী উপকৃত হবে। জমির কাগজপত্র নিয়ে এক জায়গায় বসে আলোচনা করে কাজ শুরু করলে ভালো হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এস ও মোমিনুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা জনগণের যেভাবে সুবিধা হবে সেভাবেই কাজ করব। যদি কোন জমির মালিকের অভিযোগ থাকে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবো।

এদিকে রবিবার সকালে বলাবাড়িয়া গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ বাঁধ এলাকায় তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার জন্য সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এবং তাৎক্ষণিক ভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তারা বলেন যেভাবে হোক যেদিক দিয়েই হোক আমাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। সরকারি কোন রাস্তা না থাকায় এ গ্রামে একটি গাড়ি ঢুকতে পারে না। বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগ ব্যবস্থা চরম অবনতি ঘটে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিমাই মণ্ডল, বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল, সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল প্রমুখ।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান জানান, এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কথা ভেবে এই ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিছু বাঁধা বিপত্তি দেখা দিচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট জমির মালিকের কাগজপত্র নিয়ে বসে সবার সাথে কথা কাজটি সম্পন্ন করতে চাই। বেড়িবাঁধটি নির্মাণ হলে সদর থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের যাতায়াতের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।

(আরকে/এএস/মার্চ ১৭, ২০২৪)