তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : অতি দরিদ্র আয়না বেগম। বয়স ৬৯। স্বামী আব্দুল রউফ মোল্যা (৭৫) বার্ধক্য জনিত কারণে শয্যাশায়ী। অনেক আগেই কর্মক্ষতা হারিয়েছেন। এ দম্পতির ২ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে ব্শে কয়েক বছর আগে। সহায় সম্বলহীন আয়না ও আব্দুল রউফ দম্পত্তি গ্রামে অন্যের বাড়িতে বসবাস করেন। আয়না বেগম গ্রামে কাজ-কাম করে কোন রকমে সংসার চালান। পেতেন বয়স্ক ভাতা। এ টাকায় তার স্বামীর ওষুধের খরচ চলত। কিন্তু আয়না বেগমকে মৃত দেখিয়ে কেড়ে নেওয়া হয়েছে বয়স্ক ভাতার কার্ড। এ অবস্থায় আয়না বেগমকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। আয়না বেগম ওই আব্দুল রউফ মোল্যার স্ত্রী।

পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শাওন ও নারী ইউপি সদস্য আসমা বেগম বয়স্ক ভাতার কার্ড কেড়ে নিয়েছেন বলে আভযোগ করেছেন অসহায় আয়না বেগম।

এ ব্যাপারে গত ২৫ মার্চ আয়না বেগম বাদী হয়ে গোপালগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাশিয়ানী আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বিষয়টি বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আশিক জামান উপল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাদী আয়না বেগম ২০১৭ সাল থেকে বয়স্ক ভাতা ভোগ করে আসছেন। কিন্তু তিনি গত ২০২৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন উল্লেখ করে ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। প্রত্যয়নপত্রে সনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন ওই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য আসমা বেগম। অথচ আয়না বেগম এখনও জীবিত আছেন। এতে আয়না বেগমের নামের বয়স্ক ভাতার কার্ডটি বাতিল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন আয়না বেগমের মুঠোফোনে ভাতার টাকা না আসায় তিনি কাশিয়ানী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয় গিয়ে খোঁজ খবর নেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তিনি ‘মৃত্যুবরণ’ করেছেন। পরে বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও নারী সদস্যের কাছে গেলে কোন সমাধান দেয়নি। উল্টো অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং হুমকি-ধামকিদেন বলে অভিযোগ বাদী আয়না বেগমের। পরে তিনি বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও নারী সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

ভূক্তভোগী আয়না বেগম বলেন, ‘আমি জীবিত। পরও চেয়ারম্যান ও নারী ইউপি সদস্য আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার বয়স্ক ভাতার কার্ড কেড়ে দিয়েছে। আমি শয্যাশায়ী স্বামীকে নিয়ে অন্যের জায়গায় থাকি। কাজ কাম করে এই বয়সে কষ্টে সংসার চালাই। এ ভাতার টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে খেয়ে আমার স্বামী বেঁচে আছে । আমি ভাতার কার্ড কেড়ে নেওয়ার বিচার চাই।’

ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শাওন প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘যখন লাইফ ভেরিভিকেশন হয়েছে, তখন ওই বৃদ্ধাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যরা সনাক্ত করলে, তিনি‘মৃত্যুবরণ’করেছেন বলে মর্মে আমি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। তবে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে বলে ইউপি চেয়ারম্যান আস্বস্ত করেন।’

কাশিয়ানী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ বজলুল রশিদ বলেন, ‘চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে ভাতার কার্ডটি বাতিল করা হয়েছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ০২, ২০২৪)