শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ ঈদ-উল-ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনাজপুরে। গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে এ জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে অংশ নেয় প্রায় ৬ লাখ মুসল্লি। ধনী-গরিব,উঁচু-নিচু সব ভেদাভেদ ভুলে  দিনাজপুরে এ ঈদের জামাত পরিনত হয় মুসল্লিদের জনসমুদ্রে। রূপ নেয় মিলন মেলায়। দেশ-জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে এ ঈদের নামাজে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

সকাল থেকে মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান। দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ ঈদ-উল-ফিতরের জামাতে অংশ নিতে সমবেত হয় অসংখ্য মানুষ। প্রায় ২২ একর জায়গা কানায় কানায় পূরণ হয়। এ ঈদের জামাতে দলে দলে সমাগম ঘটে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির। এ ঈদের জামাত পরিনত হয় মুসল্লিদের মিলন মেলায়। সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় এ জামাত। নামাজে অংশ নেয় প্রধান বিচারপতি এম.এনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদসহ প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষাধিক মুসল্লি।

রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুষ্টিয়া, সাতক্ষিরা, টাঙ্গাইল, বগুড়া, রংপুর, নীলফামারী, জয়পুরহাটসহ আশপাশের অনেক জেলা এবং পার্শবর্তীদেশ ভারত থেকেও মুসল্লিরা অংশ নেয় এ জামাতে। এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ এ জামাতে নামাজ আদায় করতে পেতে আনন্দে আপ্লুত হয় মুসল্লিরা।

রাজধানী ঢাকা থেকে আগত ষাটর্বেধাবয়সের কাছাকাছি মো. মোজাম্মেল হোসেন জানালেন ‘এতো বড় জামাতে এক সাথে নামাজ আদায় এই প্রথম। জানিনা, আর কখনো এই সুযোগ হবে কি না !। এই সর্ববৃহৎ ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে পেওে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।

পাশ্ববর্তীদেশ ভারত থেকে এই ঈদগাহ মাঠে ঈদেও নামাজ আদায় করতে আসা মোজাফ্ফর মোল্লা জানালেন, তিনি অনলাইন এবং টিভি চ্যানেলে এই বড় ঈদগাহর কথা জেনেছেন। দুই বছর ধরে নিয়ত করছিলেন, তিনি এই ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। তাই, এসে এবার নামাজ আদায় করলেন।

চট্রগাম থেকে এই ঈদগাহে নামাজ আদায় করলেনমইউসুফ আলী। তিনি গতকাল শ্যামলী পরিবহণের মাধ্যমে এসে সম্পর্কিত ভাতিজির বাড়িতে ছিলেন। আজ চলে যাবেন।’

দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ জানালেন, ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বড় এই ঈদ জামাতে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ঈদগাহ মাঠজুড়ে ছিলো চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করে। সকাল ৭টা থেকে মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ শুরু করেন। মাঠের চত্বরদিকে তৈরি ১৭টি প্রবেশ পথে মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। মাঠে ছিলো ৫টিঁ ওয়াচ টাওয়ার, পুলিশ ও র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প। ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ডোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ছিলো আইন-শৃংখলা বাহিনীর। মাইক বসানো ছিলো ১১০টি। ছিলো স্বাস্থ্য ক্যাম্পের ব্যবস্থা। তৈরি করা হয় ২৫০টি অজুখানা এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও মেডিকেল ক্যাম্প।

এই ঈদের নামাজ পড়ান ও মোনাজাত করান ইমামতি আলহাজ মাওলানা শামসুল হক কাসেমি। তিনি বলেন, ইমামকে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন মসজিদ এবং মাদ্রাসা থেকে নিয়োজিত ছিলো পাঁচ শতাধিক মুক্কাবির। ছিলো স্বাস্থ্য ক্যাম্পের ব্যবস্থা। তৈরি করা হয় ২৫০টি অজুখানা এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা ।কয়েকদিন প্রচন্ড তাপদাহ গেলেও আল্লাহর রহমতে আজ আবহাওয়া অনুকুলে ছিলো। মুসল্লিরা স্বস্তি পেয়েছেন, নামাজ আদায়ে।’

দেশ-জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে এ ঈদের নামাজে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এ জামাতে নামাজ আদায় করতে পেতে আনন্দে আপ্লুত হয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন, প্রধান বিচারপতি (ভারপ্রাপ্ত)এম.এনায়েতুর রহিম। তিনি বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে জামাতে অংশ গ্রহণ করতে পারাআমি মনে করি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রড় নিয়ামত। আল্লাহ যেনো আমাদের এই জামাতকে কবুল করেন এবং আমাদেও হেফাজত করেন। দেশ-জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি যেনো আল্লাহ বর্ষিত করেন।’

উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদের এই জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এই ঈদগাহ মাঠের রূপকার ও উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি।

উপমহাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ ঈদের এই জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এই ঈদগাহ মাঠ তৈরীর উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি।

তিনি বলেন, ‘দৃষ্টি নন্দন এই ঈদগাহ মিনার এ রয়েছে ৫২টি গম্বুজ। প্রধান গম্বুজের সামনে রয়েছে মেহরাব, ৪৭ ফুট উচ্চতা ইমাম দাঁড়ানোর স্থান। এর পাশাপাশি রয়েছে ৫১টি গম্বুজ। এছাড়াও ৫১৬ ফুট দৈর্ঘেও ৩২টি আর্চ নিমার্ণ করা হয়েছে। প্রতিনি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। এবার প্রায় ৬ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছে। আগামিতে এই ঈদ গাহ মাঠে মুসল্লিদের জন্য নামাজ আদায়ের পরিধি আরো বাড়ানো হবে। এজন্য স্টেশন ক্লাবটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নামাজের স্থান আরো বেড়েছে। দূর-দূরান্তের মুসল্লিদেও যাতায়াত সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়ও এই ইদ গাহ মাঠের সেন্দৈয্য বৃদ্ধিও জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এজন্য দেশের বাইওে থেকে ডিজাইনার ও প্রকৌশলী সাথে কথা হয়েছে। এই ঈদগাহ আগামিতে বিশ্বের মানুষ চিনবে বলে আমরা মনে করছি।

(এসএস/এসপি/এপ্রিল ১১, ২০২৪)