বিশেষ প্রতিনিধি : আলমগীর ও লালন মিয়ার বাড়িতে অগ্নি চেষ্টার অভিযোগে পেট্রোলের বোতলসহ সাঈদ নামের এক দুর্বৃত্তকে আটক করে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিল ভুক্তভোগীরা।

রবিবার (১৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১.টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন রাজবাড়ী জেলা সদরের কামালদিয়া মোড়ের আলমগীরের দোকানের সামনে হতে পুলিশ তাকে আটক করে রাজবাড়ী সদর থানায় নিয়ে যায়।

পরে দুপুর ১২.টার দিকে ভুক্তভোগী মোঃ লালন মিয়া ও আলমগীর মিয়া তাদের স্ত্রী সন্তান সহ পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় হাজির হয়ে একটা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী মোঃ আলমগীর মিয়া বাদী হয়ে ঘটনাস্থল থেকে আটককৃত মোঃ সাইদ (৩৮), আসন্ন উপজেলা পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ (৪৩) ও জমি বিক্রেতা মোঃ খালেক মিয়া (৬৮) সহ মোট ৭ জনকে আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে আটক সাঈদকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়। এরপর রাত আনুমানিক আটটা বা সাড়ে আটটার দিকে থানায় উপস্থিত হন ভুক্তভোগী আলমগীর কর্তৃক অভিযোগে উল্লেখিত ২নং অভিযুক্ত ব্যক্তি উপজেলা পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ (৪৩)। তখন সেখানে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্বাস আলী প্রধানও ছিলেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককে রাতেই মুঠোফোনের বানান জানান। তিনি জানান, পুলিশি তদন্তে পায় যে, সাঈদ ওই বাড়িটির ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে গেছিল, তখন বাড়ির মালিক আলমগীর ও লালন দোকানদারা তাকে ধরে নিজেদের ঘর থেকে পেট্রোলের বোতলে এনে তার হাতে দিয়ে মিথ্যা নাটক করে সাঈদকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে ওসি সাহেব জানান। পুলিশী তদন্তে এমন ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায়- মোঃ লালন মিয়া (৫৫), মোঃ আলমগীর মিয়া (৪২), মোঃ রানা মিয়া (২১) ও মোঃ স্বাধীন মিয়া (১৯) কে আটক করে থানার লকাপে আটক করে। আরেকদুকে ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া সাঈদ নামের যুবককে ছেড়ে দেয়।

পরে, থানা থেকে ছাড়া পাওয়া সাঈদ বাদী হয়ে, রাত ১২টার পর ১৫/৪/২০২৪ ইং তারিখ রাতে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার উল্লেখ; মোঃ লালন মিয়া(৫৫), মোঃ আলমগীর মিয়া (৪২), মোঃ রানা মিয়া (২১), মোঃ স্বাধীন মিয়া (১৯), মোঃ হাবিব মিয়া (৪০), সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ করিতেছি যে, আমি মোঃ আবুল কালাম আজাদকে প্রায় ৭/৮ মাস পূর্বে আমার মাধ্যমে মোঃ আব্দুল খালেকের নিকট হতে একটি দোচালা টিনের ঘর এবং দুইটি ছাপড়া ঘর ও চতুর্দিকে টিনের বেড়া সহ ২৫.৭৫ শতাংশ জমি ক্রয় করিয়া দেই এবং আবুল কালাম আজাদ আমাদের উক্ত জমি দেখাশুনার জন্য দায়িত্ব দেন। উক্ত জমি দেখাশুনা করিয়া আসিতেছি। ১৪/০৪/২০২৪ তারিখ সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় প্রাইভেট কার যোগে ইরানকে সাথে নিয়া ইন্দ্রনারায়নপুর গ্রামস্থ কামালদিয়া মোড়ে উপস্থিত হইয়া ক্রয় কিতা জমিতে (লালনের বাড়িতে) প্রবেশ কোরিয়া আমার মোবাইল ফোনে উক্ত স্থানের ছবি তুলি এবং ভিডিও করাকালে উক্ত বিবাদীরা বেআইনী জনতায় দলবদ্ধ হইয়া ১নং বিবাদী লালন মিয়া আমার গেঞ্জির কলার ধরে টেনে নিয়ে বিবাদী আলমগীরের দোকানের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিবাদীগনসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন এলোপাতারী ভাবে মারপিট করে। খুটির সহিত দড়ি দিয়ে বেধে রাখে। বাড়ী হতে একটি প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল নিয়ে এসে আমার কাছে রাখে। এবং বিবাদী হাবিব হত্যার উদ্দেশ্য গলা চেপে ধরিয়া বলে যে, স্বীকার কর, এই পেট্রোল দিয়ে তুই এখানে আগুন ধরাই নিতে এসেছিস। আমাকে জোর পূর্বক স্বীকার করাইয়া মিথ্যা মামলার ফাঁসানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমাকে মারধরের ভিডিও করে তা বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ছড়িয়ে দিয়ে আমার মান হানি ঘটায়। পরবর্তীতে আসামী মোঃ লাল মিয়া ৯৯৯ এ কল দিলে কর্তব্যরত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসিয়া আমাকে বাধা অবস্থায় পাইয়া আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে আমি
থানায় আসার পর পুলিশের নিকট সমস্ত ঘটনা বলি এবং আমি আমার পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা করিয়া আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করি।

এ ব্যাপারে, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের হিসাব রক্ষক এবং রাজবাড়ীর শিল্পপতি ও জমি ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের সাথে গতকাল মুঠো ফোনে বলেন; সাঈদ ওই জমিটি কিনে দিয়েছিলো আমার এক আত্মীয়র, ওখানে ছবি উঠাইতে গেছে সে কারেন ওর মারছে, আর আগুন ধরানোর বিষয়টি পুরো ভুয়া তথ্য। তিনি আরো বলেন, আজকে আমার বাড়িতে একজন লোক আসলে তাকে বেঁধে নিয়ে পিটিয়ে ইচ্ছামতো যা খুশি তাই স্বীকার করাতে পারি বুঝছেন, এরকম একটা ছেলেকে অকারনে আঘাত করা মোটেও ঠিক না। তিনি আরো বলেন, ওই জমি নিয়ে ৮/৯ বছর মামলা চলছে সেটার কোন হদিস নাই। ওই জমিতে ছাপরা -টাপরা ছিল সেটা নাকি ভেঙে নিয়ে গেছে, কারা ভেঙে নিয়ে গেছে, ওই ছেলেটা সেটার ছবি তুলতে গেছে। আপনি কি এর আগে আলমগীরদের ডেকে নিয়ে জমি খালি করতে বলেছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রতিবেদককে বলেন; কক্ষনো না, কোনদিনও এ বিষয়ে তাদের সাথে আর কথা হয়নি।

এ বিষয়ে, গতকাল রাজবাড়ী সদর থানার ওসি ইত্তেখারুল আলম প্রধান আটকের বিষয়টি স্বীকার করে মুঠোফোনে বলেছিলেন; আগুন দিতে আসছে কিনা এটা কনফার্ম না, তবে ইনভেস্টিগেশন চলছে বলে জানিয়েছিলেন। তবে এ বিষয় নিয়ে তার সাথে পরে আর কোন কথা হয়নি।

ভুক্তভোগী লালনের ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, একটা প্রাইভেট কার আইসে আমার দোকান পার হয়ে দাঁড়াইছে, একজন লোক ফট করে ভেতরে ঢুকছে পেট্রোলের বোতল নিয়ে, পেট্রোল ম্যাট্রোল ছিটাইছে, এরপর আগুন ধরাই দিতে গেছিল আমার দোকান ও বাড়িতে। পরে আমার বড় ভাই দেখে দাবড়াইয়া একজনকে ধরছে। আর গাড়িতে যে ছিল সে তো গাড়ি নিয়ে টাইনে চলে গেছে। আর ধরা জনকে বাইধা রাইখা জিজ্ঞাসা করাতে সে শিকাড় গিছে যে, আমাদের আবুল কালাম আজাদ পাঠাইছে। পরে পুলিশের ফোন দিয়ে পুলিশের কাছে ধরাইয়া দিছি, পুলিশ নিয়ে গিছে।

আলমগীর মিয়া আরও বলেন, এর প্রায় মাস দু'য়েক আগে, ওরা একদিন আমাকে এক/দেড়শ বার ফোন দিছে বিকেল ৫.টা পর্যন্ত। ফোন দেওয়ার পরে রাত ৮ টার দিকে আমি, আমার ভাইস্তা, আর আমার জামাই, আমাদের ৩ জনকে ডাক দিয়ে ভবানীপুর আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে নিয়ে গেছে। সেখানে আবুল কালাম আজাদের সাথে দেখা হয়, আবুল কালাম আজাদ আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার নাম কি আলমগীর? তোমার দেখার ইচ্ছা ছিল, যাই হোক বসো, বসার পরে সে বলতেছে, তোমার ওই জায়গা তো আমরা কিনছি, এখন ছাইড়া দেও। আমি বললাম স্যার ওই জায়গায় যে আপনি কিনলেন, ওটা তো আমাদের বসতবাড়ি, আমাদের দলিল আছে। সে কয় তোমাদের ওই দলিল ওইটা কিছুই না, সরকার কিভাবে দেয়, তোমাদের দলিল আমি হাইকোর্টে থেকে বাতিল করে ফেলাব, আমি বললাম স্যার এটা নিয়ে তো কোর্টে মামলা চলতেছে, সে বলে কোর্টের মামলা আমার কাছে পানি, আমি টাকা দিয়ে ওই জজ কিনে নেব পুলিশ কিনে নেব। আর এখন থেকে মনে করবা খালেকের সাথে মামলা করতেছ না, আবুল কালাম আজাদের সাথে মামলা করতেছো।

(একে/এসপি/এপ্রিল ১৬, ২০২৪)