স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে মৃদু থেকে মাঝারি এবং কোথাও কোথাও তীব্র মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কাঠফাঁটা রোদে কৃষকরা ফসলের মাঠে কাজ করতে পারছেনা। বৈশাখের ভ্যাপসা গরমে বয়স্ক ও শিশুদের অস্বস্তি চরমে উঠেছে। বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন রোগবালাইয়ে আক্রান্তরা হাসপাতালে ভীড় করছেন।

তীব্র দাবদাহের কারণে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। তাদের বেশির ভাগ রোগীই ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত। প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

তাদের সামলাতে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। শুধুমাত্র ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ১২ দিনে এক হাজার ৫৩৯ রোগী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন- অতিরিক্ত গরমে শিশুরা পেটের সমস্যা, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস ও অ্যালার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভির করছে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কিডনি রোগী ও বয়স্কদের হিট স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, শরীর জ্বালা-পোড়া, পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, ত্বকের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি ও মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, কয়েক দিন ধরে হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভীড় বাড়ছে। শিশুদের হঠাৎ জ্বর, গরমজনিত ঠান্ডা, পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, হাম, মাম্পস, পেটব্যথা, বমির মতো উপসর্গ নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন। এছাড়া অনেক শিশু ডায়রিয়া জনিত অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানান, অসহনীয় গরম এবং অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। আবার বাতাসের আদ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়ায় তাপপ্রবাহের মধ্যে ঠোঁট শুকিয়ে ও ফেঁটে যায়। তীব্র গরমে শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, রিকশাচালক, কৃষক ও নির্মাণ শ্রমিকদের মতো শ্রমজীবী, স্থুলকায় ব্যক্তি এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন ব্যক্তিরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

চিকিৎসকরা আরও জানান, প্রচণ্ড গরম থেকে রক্ষা পেতে পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরা, বাড়ির বাইরে থাকার সময় সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা এবং শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে অতিরিক্ত পানি ও শরবত পান করা প্রয়োজন। স্যালাইন পানিতে থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও চিনি শরীর সজীব রাখতে বিশেষভাবে কার্যকর। গ্রীষ্মকালীন ফলের তাজা জুস পান করা, মাংস এড়িয়ে বেশি করে খেতে হবে ফল ও সবজি। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

এদিকে, টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক জামাল হোসাইন জানান, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার(২৩ এপ্রিল) এর মাত্রা ছিল ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মূলত বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

(এসএম/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০২৪)