রিপন মারমা, রাঙ্গামাটি : কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে বুধবার মধ্যরাত থেকে। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে অন্যান্য বছরের মতো এবারও ৩ মাস সব ধরনের মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বুধবার মধ্যরাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

২৫ এপ্রিল থেকে আগামী ২৪ জুলাই তিন মাস কার্পজাতীয় মাছ হ্রদে অবমুক্ত করা ও হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। বছরের নয় মাস মাছ শিকারের মাধ্যমে পরিবারের চাকা সচল রাখলেও বন্ধকালীন থাকতে হয় কর্মহীন। তাই সামনের দিনগুলো নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা।

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা মাছের পোনার স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণে প্রতি বছর তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। যেখানে মাছ ধরে জীবীকা চালায় এই অঞ্চলের হাজারও জেলে। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার বন্ধকালীন প্রায় ২৭ হাজার পরিবারকে প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে ২০ কেজি করে চাল। কিন্তু যথা সময়ে এই সহায়তা পায় না বলে অভিযোগ জেলেদের। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

অন্যদিকে হ্রদ বন্ধকালীন সময়ে জেলেরা সহায়তা পেলেও করুন অবস্থা অবতণ ঘাটের কর্মরত শ্রমিকদের। এই তিন মাস বেকার জীবন যাপন করেন এ শ্রমিকরা। জেলেদের পাশাপাশি আবতণ ঘাটের শ্রমিকদেরও ভিজিএফ এর আওতায় আনার দাবি শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের।

এ বছর হ্রদ থেকে মাছ অবতরণ হয়েছে ৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয় প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। আজ মধ্যরাতে মাছ শিকার বন্ধ হলেও শুটকি মাছ আরও দুইটি অবতরন চলবে তখন মাছেরর অবতণ ও রাজস্ব আয় আরও বাড়বে। গত বছর জেলার ৪টি অবতরণ কেন্দ্রে ৫ হাজার ৫০৪ মে. টন মাছ অবতরণ হয়, যা থেকে রাজস্ব আদায় হয় ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল আলম ভূঁইয়া জানান, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় হ্রদের পানি দ্রুত শুকিয়ে গেছে। এর ফলে ছোট মাছ আহরণ কম হয়েছে। আবার এই সময়ে মাছের প্রজনন শুরু হয়। তাই মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ সময়ে স্থানীয় নিষেধাজ্ঞাকালীনরফকল বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারসমূহ ও কাপ্তাই হ্রদে মনিটরিং করা হবে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, অবৈধ উপায়ে মাছ ধরা, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি হ্রদের বিভিন্ন স্থানে নৌপুলিশ মোতায়েন করা হবে। হ্রদে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলেরা যাতে বন্ধকাীলন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য সহায়তা পায় সেই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি যথা সময়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে যাবে।

তিনি আরও বলেন, অনেক সময় পানি বৃদ্ধি না হলে মাছ শিকার এক মাস বৃদ্ধি করা হয় সেই বৃদ্ধিকালীন সময়েও যাতে খাদ্য সহায়তা দেয়া যায় সেটিও নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(আরএম/এসপি/এপ্রিল ২৫, ২০২৪)