সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন ৪৭ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১০টায় শতভাগ নিয়ন্ত্রনে এসেছে। তবে, আগুল লাগা বনের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাটা নালা’র (লাইন অফ ফায়ার) মধ্যে ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে আবারো যাতে আগুন জ্বলে উঠতে না পারে সেজন্য ড্রোন দিয়ে আগামী তিন দিন পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ২৫টি টিম পালাকারে লতিফের ছিলা এলাকায় কাজ করবে। 

সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ ও কিং-কোররার আধিক্য থাকা এলাকা লতিফের ছিলার বনে শনিবার সকাল ১১টায় বনের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগে। বনরক্ষীসহ ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়ার পাঁচটি স্টেশনের সদস্য, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ৪৭ ঘণ্টা পর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আগুন শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসে। ইতিমধ্যেই পুড়ে যায় দুই কিলোমিটার এলাকার ছোট-ছোট গাছপালাসহ লতাগুল্ম।

বিশ্ব ঐতিহ্য সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ এই বনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গঠিত দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি সোমবার সকাল থেকে সরেজমিনে কাজ শুরু করেছে। অনির্দিষ্টকালেরজন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বনজীবীদের জন্য সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধরা স্টেশনের আওতাধীন সব বন অফিস থেকে দেয়া পাশ-পারমিট।

এদিকে, দেশের অক্সিজেনের অফুরন্ত ভান্ডার বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবনের আগুনে পরিবেশগত কি ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে তা দেখতে সোমবার দুপুরে আগুনে পোড়া বন পরিদর্শন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশাসন) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকার বনে অগ্নিকান্ড এলাকা পরির্দশন শেষে সোমবার সাকাল সাড়ে ১০টায় আগুন শতভাগ নিয়ন্ত্রনের ঘোষনা দেন। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের এই উচু এলাকাটিতে পাতাপড়ে মাটির নিচে গ্যাস তৈরী হওয়ার কারনে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা কঠিন। আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার পরও কখনো কখনো ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে আগুন জ্বলে ওঠে। সেজন্য দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাইন অফ ফায়ার (নালা) কেটে পানি ভরে দেয়া হয়েছে। আগুন যাতে আবাও জ¦লে উঠতে না পারে সেজন্য আরো তিন দিন ড্রোন দিয়ে পর্যবেক্ষনের পাশাপাশি ২৫টি টিম পালাকারে লতিফের ছিলা এলাকায় কাজ করবে।

প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) আমির হুসাইন চৌধুরী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, আগুন লাগার স্থানে পরিবেশগত পরিবর্তনে জীববৈচিত্র্যের কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে ও ভবিষতের করনীয় নির্ধারনে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো’কে প্রধান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকদের নিয়ে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরআগে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে চাঁদপার রেঞ্জে কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরো একটি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহম্মদ নুরুল করিম জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আগুন শতভাগ নিয়ন্ত্রনে এসেছে। কি ভাবে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ও জীববৈচিত্র্যের কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে এজন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই দুটি তদন্ত কমিটি সোমবার থেকে সরেজমিনে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত রিপোর্ট পাবার পর কিভাবে আগুন লেগেছে ও জীববৈচিত্র্যের কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তরিত জানা যাবে।

(এস/এসপি/মে ০৬, ২০২৪)