ত্রিশালে ট্রিপল মার্ডারের মূল হত্যাকারী গ্রেফতার, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

নীহার রঞ্জন কুন্ডু, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রিপল মার্ডারের মূল হত্যাকারী আসামি আলী হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার লোমহর্ষক র্বণনা দেন আলী হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ।
এর আগে গত ২১ মে দুপুরে ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়নের কাকচর নয়াপাড়ায় জমির আইলের পাশে মাংস বিহীন হাড় মাটির উপর পড়ে থাকার সংবাদে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। ওই সময় ক্ষেতের আশপাশ থেকে ৩টি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে ২টি শিশুর লাশ ধান ক্ষেতের উপর ও আইলের পাশে মাটিতে পুতে রাখা অবস্থায় দেখতে পান। এছাড়া মাটিতে পুতে রাখা লাশটি উত্তোলন করে মহিলার অর্ধগলিত লাশ হিসেবে সনাক্ত করা হয়। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে প্রেরণে লাশগুলো ত্রিশাল থানায় নিয়ে আসা হয়।
ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামেন জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশ। ডিবি ওসি ফারুক হোসেন জানান তথ্য প্রযুুক্তি ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল হোতা নিহত স্ত্রী সন্তানের ঘাতক আলী হোসেনকে গত ২২ মে গাজীপুরের শ্রীপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। আসামি আলী হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক র্বণনা প্রদান করেন এবং বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
জানা গেছে,আলী হোসেন দিন মজুরের কাজ করত। তার কোন জমিজমা ছিল না। অভাবের সংসারে স্ত্রী আমেনা খাতুন এবং দুই ছেলে ছিল। বড় ছেলের নাম আবু বক্কর সিদ্দিক (৪) ও ছোট ছেলে আনাছ (২ বছর ৬ মাস)। তিনি তার চাচার দেওয়া জমিতে অনেক দিন ধরে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন। সংসারে সারা বছর অভাব অনটন লেগেই থাকত। ঠিকমত তার সংসার চালাতে পারত না। তাই সে বিভিন্ন সময় তার স্ত্রী আমেনার নাম দিয়ে এনজিও থেকে টাকা তুলত। সেই টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে অপমান করা হত। ঋণের বোঝা ও সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে আলী হোসেন তার স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৭ মে প্রথমে স্ত্রীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ও পরে দুই সন্তানকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে স্ত্রীকে কাঁধে তুলে নিয়ে ঘরের পিঁছন দিয়ে জঙ্গলে নিয়ে রাখেন এবং এর পরপরই তার দুই ছেলেকেও কোলে করে ঐ জঙ্গলে নিয়ে আসে। তারপর জনৈক ইউসুফ ও কালামের জমির মাঝখানে সীমানা বরাবর মাটিতে গর্ত করে লাশ পুতে রাখে। পরবর্তীতে ট্রেনে উঠে কমলাপুর রেল ষ্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা করে। ডিবির হাতে গ্রেফতারের আগে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় গোপনে ছিল।
উল্লেখ্য, আসামির বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় ২০১২ সালে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় একটি মামলায় ০৫ বছর কারাভোগ করে ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে জামিনে মুক্তি লাভ করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
(এনআরকে/এসপি/মে ২৩, ২০২৪)