উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে স্থানীয় যুবকদের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও পুলিশের ৩ সদস্যসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। এসময় দোকানে হামলা ভাঙচুর, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল ও কাঁচের বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম আল আমিন খান (৩২)। সে ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আঃ মজিদ খান ডেঙ্গুর মেজো ছেলে।পেশায় আটো চালক ও তার দুটি কন্যা শিশু রয়েছে।

আহতদের মধ্য ৩ পুলিশ ও তিন যুবক চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, স্বপন, আলামিন ও মনিরুল।

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে পৌণে এগারোটা পর্যন্ত পুরান বাজার ম্যারকাটিজ রোড পলাশের মোড় ও নিতাইগঞ্জ সড়কে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। ওই নির্বাচনের পর থেকে তাদের মধ্যে প বিরোধ দেখা দেয়।
ঘটনার রাতে মধুসূদন হাইস্কুল মাঠে ম্যারকাটিজ রোডের ছেলেরা আড্ডা দিচ্ছিল। ওই সময় নিতাইগঞ্জের ছেলেরা মাঠে গিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করে।

এ ঘটনায় মুহূর্তের মধ্য ওই দুই এলাকার যুবকদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া বৃষ্টির মতন ইটপাটকেল ও কাঁচের বোতল নিক্ষেপ এবং সংঘর্ষ। এ সময় উভয় গ্রুপ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর ধাওয়া করে এবং আশেপাশের বেশ কিছু দোকানপাটেও হামলা চালায়। ওই দুই সড়কের মাঝামাঝি পলাশের মোড় সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়।

নিতাইগঞ্জ রোডের সজীব মাঝি এবং ম্যারকাটিজ রোডের মোবারক বেপারী ও শান্ত হাওলাদার গ্রুপের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী চলে এ সংঘর্ষ। এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।বন্ধ হয়ে যায় দুইদিকের যানবাহন চলাচল।

খবর পেয়ে প্রথমে পুরান বাজারে ফাঁড়ি পুলিশ সংঘর্ষে লিপ্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। তাতেও সংঘর্ষ না থামায় চাঁদপুর সদর মডেল থানাসহ অন্যান্য পুলিশ ফোর্স যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে।এরপরই ওই এলাকার সংঘাতময় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সংঘর্ষে লিপ্ত সবাই সরকার দলীয় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বলে জানা যায়।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার সবুজ জানান, লোকটিকে তারা মৃত অবস্থায় পেয়েছে। তার মাথায় জখমের চিহ্ন রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়।

এদিকে, আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে ছুটে আসেন এসপি পদোন্নতি প্রাপ্ত চাঁদপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদ চৌধুরী,সদর মডেল থানার ওসি শেখ মহসীন আলমসহ অন্যরা।

জেলা পুলিশের ওই কর্মকর্তারা জানান, পুরাণবাজারের দুটি গ্রুপের মধ্যে আগে থেকেই ঝামেলা ছিলো।এরপর তারা মারামারিতে লিপ্ত হয়। পুলিশ টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তদন্ত হচ্ছে। যারাই ের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পুরানবাজারে এর আগেও এলাকার আধিপত্য নিয়ে একই দলের রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে চলা স্থানীয়দের মধ্যে কয়েক দফা মারামারি হয়।

পুরাণবাজারের অধিকাংশ পাড়া মহল্লা ও এলাকায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি হচ্ছে এবং তাদের প্রভাব জানান দিতে মাদক, চাঁদাবাজীসহ নানা অপরাধের সঙে জড়িয়ে পড়ছে এবং অনেকে দলবল নিয়ে নিরীহ মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাচ্ছে। মুষ্টিমেয় চিহ্নিত কিছু লোক জেলার নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী অপরাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে এলাকার সচেতন ও পর্যবেক্ষ মহল মনে করছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২ জুলাই সংঘটিত দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শামীম গাজী (২৬) নামে এক আবাসিক হোটেল কর্মচারী যুবক নিহত হয়। এবার মারামারিতে ঝরে গেল আরেক যুবকের প্রাণ।

(ইউএইচ/এসপি/জুন ১২, ২০২৪)