শেখ ইমন, শৈলকুপা : ব্যান্ডেজে মোড়ানো কাটা হাতের দিকে অপলক দৃষ্টি। চোখের কোণে জমা অশ্রুবিন্দু মুহূর্তেই গড়াল গাল অব্দি। অসহনীয় যন্ত্রণাকাতর চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় অসার এই যুবকের দিকে অনেকগুলো কৌতূহলি চোখ। আছে পুলিশি পাহাড়াও। কিন্তু কেন তার এই অবস্থা? তার নিঃশব্দ কান্নার রহস্যই বা কী? জবাব খুঁজতে বেরিয়ে এলো হৃদয়বিদারক ও বর্বরোচিত কাহিনি। পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন যুবক ঢাকা কলেজের ছাত্র। নাম ফিরোজ শিকদার।

ফিরোজ ও তার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে ডান হাত হারাতে হয়েছে তাকে। তার জীবনে নেমে এসেছে কালো ছায়া। পুলিশের মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। শৈলকুপা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম চৌধূরীর স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার বলি হয়েছেন ফিরোজ।

জানা গেছে, গত রবিবার দুপুরে শৈলকুপা উপজেলার ধাওড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে মোস্তাক শিকদারকে একটি মারামারির মামলায় গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর বিকাল ৩টার দিকে শত শত মানুষ মোস্তাক শিকদারের মুক্তির দাবিতে শৈলকুপা থানার সামনে জড়ো হন।

মোস্তাক শিকদারের বড় ভাই মহসিন শিকদারের অভিযোগ, ‘থানার গেট থেকে পুলিশ আমার চাচাতো ভাই ঢাকা কলেজের ছাত্র ফিরোজ শিকদারকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর ওসি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী তাকে আটকে রাখেন, আর এসআই মনির তার ডান হাতে গুলি করেন। এ ঘটনার পরপরই থানা গেটে জড়ো হওয়া লোকজন উত্তেজিত হয়ে থানা ঘেরাও করেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ বৃষ্টির মতো শটগানের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়ে। এতে অন্তত অর্ধ-শতাধিক লোক আহত হন।

গুরুতর অবস্থায় কলেজছাত্র ফিরোজ শিকদারকে উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইদহ এবং পরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপ্যাডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা কোনোভাবেই ফিরোজের ডান হাতটি টিকিয়ে রাখতে পারেননি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার হাতটি কেটে ফেলা হয়েছে। ফিরোজ শৈলকুপার ধাওড়া গ্রামের কাশেম শিকদারের ছেলে।

তবে এসকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন শৈলকুপা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিদর্শক মনির হাজরা।

এসআই মনির হাজরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ঘটনার সময় তিনি থানায় ছিলেন না। গাড়াগঞ্জ এলাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। সেখানে ছিলেন তিনি।’

ওসি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যখন হামলা হয় তখন আমি খাচ্ছিলাম। ঘটনাস্থলে ছিলাম না। শেষ মুহুর্তে ঘটনাস্থলে এসেছি। যারা থানায় হামলা করেছিল, কাউকে পুলিশ থানায় ঢুকতে দেইনি। সিসি ক্যামেরা ফুটেজে সব আছে। হামলাকারীরা বাইরে থেকে ইট মেরে আমাদের আহত করেছে। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

ওসি বলেন, থানায় সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনায় ছয় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলার বাদী এসআই লাল্টু রহমান। ১১৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় অজ্ঞাতনামাসহ আরও ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে ডিবি মামলাটি তদন্ত করছে।

শৈলকুপা পৌরসভার মেয়র কাজী আশরাফুল আজম জানান, ‘ওসি সফিকুল ইসলাম চৌধুরী এই থানায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন। প্রতিনিয়ত তিনি নিরীহ লোকজনকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে যাচ্ছেন। ফিরোজকেও থানার ভেতরে নিয়ে গুলি করা হয়েছে।’

(এসআই/এসপি/জুন ১৪, ২০২৪)