ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : বিনা দোষে ৪৩ বছর জেল খাটার পর অবশেষে এক নারীকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির একটি আদালত। সান্দ্রা নামের ওই নারী যৌবনের শুরুতে জেলে প্রবেশ করেছিলেন। এখন তাঁর বয়স ৬৪ বছর।

আদালতের বিচারক সান্দ্রার নির্দোষ প্রমাণ হওয়াকে ‘স্পষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য’ বলে রায় দিয়েছেন। তবে এখনো জেলেই অবস্থান করছেন তিনি। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, খুনের মামলাটিতে একটি নতুন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই প্রমাণ অনুযায়ী, সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা ওই খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন।

আইনজীবীরা দাবি করেছেন, মার্কিন ইতিহাসে সান্দ্রাই এখন নির্দোষ হয়েও সবচেয়ে বেশি সময় ধরে জেল খাটা নারী। চার দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৮০ সালে মিসৌরির সেন্ট জোসেফ এলাকায় খুন হয়েছিলেন প্যাট্রিসিয়া নামে এক লাইব্রেরি কর্মী। পরে এই হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল সান্দ্রাকে।

দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো—আদালতে সেই সময়ের ২০ বছর বয়সী সান্দ্রা নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি প্যাট্রিসিয়াকে হত্যা করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে বিচার চলার সময় মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন সান্দ্রা। শক্তিশালী ওষুধের প্রভাবেই তিনি খুনের ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে ভুল-ভাল বক্তব্য দিয়েছিলেন।

আদালত আরও খুঁজে পেয়েছে, সান্দ্রার স্বীকারোক্তির বাইরে ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগসূত্রই খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনো প্রত্যক্ষদর্শীই সান্দ্রাকে অপরাধের দৃশ্যের সঙ্গে যুক্ত করেননি। প্যাট্রিসিয়াকে ক্ষতি করার কোনো উদ্দেশ্য কিংবা কারণও ছিল না তাঁর। দুজনের দেখা হয়েছিল কখনো এমন প্রমাণও হাজির করা যায়নি। কোনো শারীরিক বা ফরেনসিক প্রমাণও সান্দ্রাকে দোষী প্রমাণ করতে পারেনি।

নিউইয়র্কে অবস্থিত দ্য ইনোসেন্স প্রজেক্ট সান্দ্রার মামলাটি গ্রহণ করেছিল। ইনোসেন্স প্রজেক্ট হলম্যান নামে সেন্ট জোসেফ পুলিশের এক কর্মকর্তাকে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকা এবং প্রমাণ গোপন করায় অভিযুক্ত করেছে। তবে ২০১৫ সালেই হলম্যান মারা গেছেন।

এক বিবৃতিতে ইনোসেন্স প্রজেক্ট জানিয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা মাইকেল হলম্যান হত্যাকাণ্ডের পরের দিনই নিহত প্যাট্রিসিয়ার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার সময় তাঁর গাড়িটিও প্যাট্রিসিয়ার বাড়ির কাছে পার্ক করা ছিল বলে সাক্ষ্য আছে। হলম্যানের ব্যবহৃত টয়লেট থেকে প্যাট্রিসিয়ার কানের দুলও পাওয়া গিয়েছিল। হলম্যানের বিরুদ্ধে নারী-বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের আরও অনেক অভিযোগ ছিল।

নতুন প্রমাণ পাওয়ায় জেসের হত্যাকাণ্ডের বিচার আবার নতুন করে শুরু হবে কি-না তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যেই নির্দোষ সান্দ্রাকে মুক্তি দিতে হবে।

(আইএ/এসপি/জুন ২০, ২০২৪)