নিউ ইয়র্কে দুর্বৃত্তের হামলায় আরও এক বাংলাদেশি নিহত
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : নিউ ইয়র্কে দুর্বৃত্তের হামলায় আরও এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গত শনিবার (২২ জুন) রাতে নিউ ইয়র্কের কুইন্সের জ্যামাইকা এভিনিউয়ে দুই দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নূরুল ভূঁইয়া (৪০) নিহত হয়েছেন। ঘটনার ২দিন পর পুলিশ জশুয়া কেলি (২৪) নামের ওই ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঐদিন রাত পৌনে ১০টার দিকে জ্যামাইকা এভিনিউতে ১৬৯ স্ট্রিটে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সূত্রপাত্র হয়েছিল জ্যামাইকা এভিনিউয়ে স্যামি গুরমেট ডেলির কাছে।
এর আগে গুরমেট ডেলির ভেতরে বাক তিণ্ডার এক পর্যায়ে কাউন্টারের পেছনে হামলাকারীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তারা উভয়ে দোকানের সবকিছু নিয়ে একে অন্যকে আক্রমণ করে। এরপর নূরুল ভুঁইয়া স্টোরের বাইরে এলে জ্যামাইকা এভিনিউয়ের উপর ঘাতক তার ওপর চড়াও হয়। ভূঁইয়া এক পর্যায়ে দৌড়ে স্টোরে প্রবেশ করেন এবং ঘাতকও তাকে ধাওয়া করে কাউন্টারের ভেতর প্রবেশ করে রুটি কাটার ছুরি দিয়ে আঘাত করে। ঘাতক কেলি চিৎকার করে বলতে থাকে যে, 'সে আমার ওয়ালেট চুরি করেছে'। কিন্তু নূরুল ভূঁইয়া তার ওয়ালেট নিয়েছেন বলে ঘাতকের অভিযোগ সারভেইল্যান্স ভিডিওতে প্রমাণ হয়নি। নূরুল ভূঁইয়া সেন্ট আলবানসে বাস করতেন।
নুরুল ভূঁইয়া তখন আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিলেন তখন ঘাতক জশুয়া কেলি স্টোরের মাংস কাটার অংশে গিয়ে একটি ছুরি নিয়ে ভূঁইয়াকে আঘাত করার চেষ্টা করলে ভূঁইয়া কাউন্টারের পেছন থেকে একটি বেসবল ব্যাট এনে ঘাতককে ঠেকাতে চেষ্টা করেন। কেলি ভূঁইয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে বেশ কয়েক দফা ছুরি দিয়ে আঘাত করে। আঘাতের পর রক্তাক্ত কেলি সিঙ্কে গিয়ে রক্ত ধৌত করে এবং বিস্মিত দোকান কর্মচারিরা তাকে পেপার টাওয়েল এগিয়ে দেয়। এরপর লোকটি শান্তভাবে স্টোর থেকে বের হয়ে যায়। স্টোরের ভেতরেই নূরুল ভূঁইয়ার মৃত্যু ঘটে।
পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে জশুয়া কেলির শরীরে সুনির্দিষ্ট ট্যাটু দেখে তাদের ডাটবেজ থেকে তাকে শনাক্ত করে এবং গত ২৪ জুন সোমবার তাকে তার কুইন্স ভিলেজের বাড়ি থেকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে মামলা করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে জশুয়া ক্যালি আরও আটবার গ্রেফতার হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে ২৬ জুন বুধবার বাদ মাগরিব জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে নূরুল ভূঁইয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার তাকে লংআইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল গোরস্তানে দাফনের কথা। নূরুল ভূঁইয়ার দেশের বাড়ি বিক্রমপুরের সিরাজদীখান উপজেলায়। ১৮ বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তার ১৪ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে নূরুল ভূঁইয়া সবার ছোট। তার এক ভাই ক্যালিফোর্নিয়া, এক ভাই মিশিগান এবং বোন নিউইয়র্কের লংআইল্যান্ডে থাকেন। একসময় তিনি জ্যামাইকা এভিনিউতে মোবাইল ফোনের ব্যবসা করতেন। গত ২২ জুন শনিবার খুন হলেও তার পরিবার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন গত ২৪ জুন সোমবার। পুলিশ তার সাথে পরিচয়পত্র না পাওয়ায় পরিবারকে তাৎক্ষণিক কোন তথ্য দিতে পারেনি।
(আইএ/এসপি/জুন ২৮, ২০২৪)