বাড়ির পিছনের উঠোনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কর্মকান্ড, নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : বাড়ির পিছনের উঠোন (ব্যাকইয়ার্ড)-এ বন্দি হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির রাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্র সফররত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের মতবিনিময় করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন শত শত নেতাকর্মী।
গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশ ও প্রবাসের বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা কর্মসূচি নিয়ে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঠিক তখনই বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির নেতাকে নিয়ে বাড়ির পিছনের উঠোন (ব্যাকইয়ার্ড)-এ ব্যক্তিগত পার্টি করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ পার্টিকে দলীয় কর্মসুচি বলে চালানোরও চেষ্টা করছেন কতিপয় নেতাকর্মী।
অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তেমন কোন কর্মসুচি এখনও দেখা যায়নি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি না পাওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। পদ পদবির আশায় আভ্যন্তরিন কোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের মতবিনিময় সভা বাতিল করা হয়েছে। তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরকে কেন্দ্র করে ১৮ জুন নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ড ফেয়ার মেরিনায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কমিটির ভেলকিবাজীর খেলায় পদহারাদের তোপের মুখে মতবিনিময় সভাটি বাতিল করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের মতবিনিময় সভা বাতিলের তিনদিন পরেই গত ২২ জুন বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টনের বাড়ির পিছনের উঠোন (ব্যাকইয়ার্ড)-এ নৈশ্যভোজ ও পরিচিত সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি একান্ত ব্যক্তিগত ও ঘরোয়া হলের অনুষ্ঠানের পর সেটিকে দলীয় কর্মসুচি বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। বেশ কয়েকটি পত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। এর ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কিছু নেতাকর্মী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, যে কোন বিষয়ে ধৈয্যেরও একটা সীমা থাকে। কেন্দ্রিয় বলে আর লন্ডন বলেন নেতারা আমেরিকায় আসেন আর মজা নিয়ে চলে যান। যাবার সময় বলে যান খুব শিগগির যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি নিয়ে কেন্দ্রিয় নেতা ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলবেন। আশ্বাস আর মিথ্যে প্রলোভন দিয়ে চলছে বছরের পর বছর।
তিনি বলেন, এসবের নাটের গুরু হচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন। তিনি দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের আসেন আর ডলারের মোটা মোটা বান্ডিল নিয়ে লন্ডনে যান। কখনও কেন্দ্রিয় কমিটির নাম করে, কখনবা লন্ডনি নেতাদের নাম করে। অতি সাম্প্রতি নিউ ইয়র্কের তিনটি কমিটি-নিউ ইয়র্ক স্টেট, নিউ ইয়র্ক মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনা করেন। প্রার্থীদের মনোনয়ন ফি'র জমার অর্থ তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে তার পাঠানো লোক মারফতে লন্ডনে নিয়ে যান। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকীর দিনে তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আনোয়ার হোসেন খোকন ১৮ হাজার ডলার সংগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকেও কমিটি করার নাম করে নিয়মিত মোটা অংকের অর্থ কামাচ্ছেন। তার দেওয়া কমিটিগুলো দুই বছর পর নির্বাচন হবার কথা থাকলেও একই কমিটি বছরের পর বছর ধরে চালাচ্ছেন এসব দল। আর এ জন্য তাকে প্রতি বছর নবায়ন ফিও দিতে হয় বলে উল্লেখ করেন সূত্রটি।
জানা যায়, তিনি অর্থের বিনিময়ে যাদের নাম সুপারিশ করেন তারাই বিভিন্ন পদ পদবি পেয়ে থাকেন। অতি সাম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আরো তিনজনকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। গত ২৪ জুন সোমবার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়। এই কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন- নিউ ইয়র্ক থেকে গোলাম ফারুক শাহীন, ওয়াশিংটন থেকে ওয়াশিংটন বিএনপির সভাপতি হাফিজ খান সোহায়েল, পেনসিলভানিয়া থেকে পেনসিলভানিয়া বিএনপির সভাপতি শাহ ফরিদ, জর্জিয়া বিএনপির সভাপতি নাহিদ খান সাহেল ও ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপি নেতা বদরুল ইসলাম শিপলু। তবে এ ধরনের কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ত্যাগী ও ঝানু যেসব নেতাদের দায়িত্ব পাবার কথা ছিল তারা দায়িত্ব না পাওয়ায় অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কমিটিতে অনাকাঙ্খিত লোকদের নাম আসায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকেই তা মেনে নিতে পারছেন না। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা।
(আইএ/এসপি/জুন ২৮, ২০২৪)