রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলা রেকর্ড করার খবর জানতে যেয়ে আসামীর দায়েরকৃত শ্লীলতাহানির মামলায় দৈনিক বাংলা ’৭১ এর ভোলা প্রতিনিধি চপল রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে তাকে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চপল রায় ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার শশীগঞ্জ গ্রামের বিধুভূষণ রায় এর ছেলে।

সাংবাদিক চপল রায় জানান, তজুমদ্দিন উপজেলা পরিষদের কৃষি অফিসের পশ্চিম পাশে ভূমিদস্যু হুমায়ুন কবীর সরকারি সাড়ে তিন শতক জমি জবরদখল করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন। চলতি বছরের ১৩ জুন ওই জমি সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে তজুমদ্দিন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর তাছে তধ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। মাপ জরিপ করার পর ভূমিদস্যু হুমায়ুন কবীর সাড়ে তিন শতক জমি দীর্ঘদিন জবরদখল করে আছেন মর্মে গত ১০ জুলাই মিশনার (ভূমি) আবুল হাসানত ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর পাঠান। একপর্যায়ে হুমায়ুন কবীরকে ওই জমি ছেড়ে দিতে হবে জানতে পেরে ক্ষুব্ধ ছিলেন তার (চপল রায়) উপর।

চপল রায় জানান, গত ১৪ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে তার স্ত্রী তজুমদ্দিন উপজেলা সদর থেকে রিক্সায় দাসেরহাট ভবানী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নেমে পায়ে হেঁটে গিরিধারী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি ফাঁকা মাঠে হুমায়ুন কবীরের বন্ধু বলে পরিচিত আড়ালিয়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন মজুমদারের ছেলে প্রবীর মজুমদার ও একই গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ দাসের ছেলে কুমুদ দাস মটর সাইকেল থেকে নেমে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তার স্ত্রীর ডাক চিৎকারে পথচারিরা ছুঁটে এলে প্রবীর ও কুমুদ পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় রাতে থানা মামলা নিতে অস্বীকার করায় তার স্ত্রী বাদি হয়ে ভোলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৪(খ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রবীর মজুমদার ও কুমুদ দাসকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়। বিচারক আনোয়ারুল হক মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এ সংক্রান্ত আদেশটি সোমবার বিকেলে থানায় পৌঁছায়।

চপল রায় আরো জানান, লিভারে যন্ত্রণার কারণে সোমবার বিকেলে তিনি তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর আড়াইটার দিকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাসমিরা খাতুন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। এরপরপরই তিনি তজুমদ্দিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অফিসে ঢুকে তার স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলাটি রেকর্ড হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তাকে আসামী প্রবীর মজুমদারের মেয়ের শ্লীলতাহানির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

চপল রায় এর অভিযোগ, আসামী প্রবীর মজুমদারের শ্বশুর নকুল দাস এর বাড়ির পাশেই ভূমিদস্যু হুমায়ুন কবীরের বাড়ি। হুমায়ুন কবীর প্রভাব খাটিয়ে প্রবীর ও কুমুদকে তার স্ত্রী বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন। একপর্যায়ে নিজেদের বাঁচাতে প্রবীর মজুমদার ঢাকার আজমীর কলেজের একাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে দিয়ে গত ৫ জুলাই কাল্পনিক শ্লীলতাহানির ঘটনা দেখিয়ে ২৫ দিন পর ৩০ জুলাই মামলা(১৫) রেকর্ড করানো হয়েছে। অথচ তার স্ত্রীর ধর্ষণের চেষ্টা মামলাটি সোমবার থানায় আসার পরও তড়িঘড়ি করে প্রবীরের দাসের অভিযোগটি আগে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পরে তার স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা রেকর্ডের পর প্রবীর ও কুমুদ থানায় এলেও তাদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

এ ব্যাপারে তজুমদ্দিন উপজেলা সহকারি কমিশনার আবুল হাসানত জানান, সাংবাদিক চপল রায় এর আবেদনের ভিত্তিতে মাপ জরিপ করে হুমায়ুন কবীর সরকারি সাড়ে তিন শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলে আছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। ওই জমি সংক্রান্ত বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (ভ‚মি) অভহিত করা হয়েছে।

তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তাসমিরা খাতুন জানান, সাংবাদিক চপল রায় এর পেটে খুব যন্ত্রণা হওয়ায় তাকে সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের অতিরিক্ত ৭নং শয্যাতে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়।

তজুমদ্দিন উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামের প্রবীর মজুমদার ভূমিদস্যু হুমায়ুন কবীর তার পরিচিত উল্লেখ করে জানান, তার মেয়েকে গত ৫ জুলাই শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিনি চপল রায় এর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ করেন। কিন্তু এ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চপল রায় তাকে ও তার বন্ধু কুমুদ এর নামে ১৪ জুলাই বিকেলে স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করায় ৩০ জুলাই তিনি বাদি হয়ে মেয়ের শ্লীলতাহানির ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ারুল হক জানান, প্রবীর মজুমদার নামে এক ব্যক্তির কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মঙ্গলবার সকালে দায়েরকৃত মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এরপরপরই চপল রায়ের স্ত্রীর আদালতে দায়েরকৃত মামলাটির আদেশ পেয়ে সেটিও রেকর্ড করা হয়েছে। তার অফিসে আসায় মামলার আসামী হিসেবে চপল রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চপল রায় এর স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলার আসামীদের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ভোলা পুলিশ সুপার মোঃ মাহিদুজ্জামান এর সাথে মঙ্গলবার বিকেলে কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

(আরকে/এএস/জুলাই ৩০, ২০২৪)