বিনোদন ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেমেছিলেন সংগীত শিল্পী রাহুল আনন্দ। ছিলেন সরকার পতনের এক দফার গণ আন্দোলনেও। তবে ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর সহিংসতা থেকে রক্ষা পেলেন না তিনিও। 

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের পাশেই একটি বাড়িতে থাকতেন রাহুল আনন্দ। গত সোমবার দুর্বৃত্তরা তার সেই বাড়িটিও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। পুড়ে গেছে তার নিজের হাতে বানানো তিন শতাধিক বাদ্যযন্ত্র। বাড়ির মালামালও হয়েছে লুটপাট।

জলের গানের মূল ভোকালিস্ট রাহুল আনন্দ বলেন, ‘কিছু ছেলেপেলে এসে আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলল, তাদের বললাম, আমি তো তোমাদের জন্যই গান করি। এই আন্দোলনেরও সমর্থক ছিলাম। তবুও আমার বাড়িতে কেন হামলা করছ?’ ‘তারা বলল, ‘আপনারা বের হয়ে যান, না হলে বিপদ হবে’। পরে আমরা বেরিয়ে চলে আসি।’

রাহুল বলেন, ‘এরপরই বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয় এবং ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। ঘর থেকে লেপ-তোষকও নিয়ে যেতে দেখা যায়। এসিও খুলে নিয়ে যায় লুটপাটকারীরা। আমার নিজের হাতে বানানো বাদ্যযন্ত্রগুলো, এগুলো আমার অনেক মূল্যবান সম্পদ। তাদের অনুরোধ করেও রক্ষা করা গেল না। যারা আগুন দিয়েছে, তারা আমাকে চিনেছে। আমি তো মানুষের জন্যই গান করি। তবুও তারা আমার সব বাদ্যযন্ত্রগুলো পুড়িয়ে দিল।’

রাহুল আনন্দ দেশের জনপ্রিয় গানের দল 'জলের গান' এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও লিড ভোকালিস্ট। সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতেও তিনি সরব থাকেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে নিজের দলের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ছাত্র হত্যার।

আন্দোলনে অংশ নিয়ে এর আগে রাহুল আনন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, "আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। আমরা শান্তি চাই, এই দেশে রক্তপাত চাই না- এই বার্তাটি সবাইকে দিতে সংগীতাঙ্গনের লোকজন নিয়ে জড়ো হয়েছি।

“আমাদের কতগুলো তাজা প্রাণ ঝড়ে গেল। এই প্রাণগুলো তো আর ফিরে আসবে না। অনেক সম্পদেরও ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো হয়ত ঠিক হবে। যে মায়ের বুক খালি হল, তার ক্ষতি তো আর পূরণ হবে না। এরকম রক্তপাত আর চাই না।”

তার বাড়িতে হামলার ঘটনায় সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই ফেইসবুকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এ হামলার ঘটনায় বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় সেগুনবাগিচায় জাতীয় নাট্যশালার সামনে প্রতিবাদ জানানোর কথা রয়েছে সংস্কৃতিকর্মীদের।

জলের গান তাদের ফেইসবুক পেইজে লিখেছে, ‘এই বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসত বাড়ি ছিল না; ছিল পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত সু্র, আর দাদার ভাবনাপ্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র। শুধু তাই নয়। জলের গানের অফিশিয়াল স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহৃত হত বাড়িটি। দলের সকলের দলগত সংগীত চর্চা থেকে শুরু করে, সকল স্টুডিও ওয়ার্ক– রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং এখানেই হত।

জলের গান জানান, আগুনে বাদ্যযন্ত্র, গানের নথিপত্রের পাশাপাশি অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ছাড়াও খাট ও আলনাসহ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

(ওএস/এএস/আগস্ট ০৭, ২০২৪)