বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, মহম্মদপুর : মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা থেকে দিন-দিন হারিয়ে যেতে বসেছে চিরচেনা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের গাছ। ‘ঠিলে ধুয়ে দে বৌ গাছ কাটতি যাবো, সন্ধ্যার নস পাড়ে আনে যাও নান্দে খাব’ এই গান স্মৃতি হয়ে থাকবে। 

দিন দিন কমতে শুরু করেছে প্রকৃতির এই খেজুরের গাছ। গ্রামীণ জনপদের মানুষের কাছে সুস্বাদু খেজুরের রস বা গুড় পাটালি বাঙালির কাছে এক অন্যরকম স্বাদের। এক সময় মানুষের বাড়ির পাশে সড়কের পাশে মাঠে জমির আইলে সারি-সারি খেজুরের গাছ দেখা যেত। সেই সাথে শীতকাল আসলেই খেজুর গাছ কেটে হাঁড়ি ভরে হাট বাজারে রস বিক্রয় করতেন গাছিরা। খেজুরের গাছ কাটার দৃশ্য দেখতে এবং খেজুরের মাথি খেতে গাছের আশপাশ দিয়ে শিশুরা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ভিড় করতো। খেজুরের মাথি নিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা যেত। শীতকালে শিশুরা খেজুর গাছের শুকনা সর্পা বা ঝুপড়ি কুড়িয়ে এনে কয়েক জন শিশু দলবদ্ধ হয়ে। বড় কচুর পাতা ফুটো করে হাওয়াই বাজি খেলতো এবং শিশুদের আনন্দ উৎসব করতে দেখা যেত। কালের বিবর্তনে অনেক খেজুর গাছ রোগান্নিত হয়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন গাছি জানান, আগেকার দিনে পরিবেশ অনেকটা ভালো ছিল।বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ দূষণের কারণে আগের মতো গাছে তেমন তেজ নেই। অনেক খেজুর গাছ আছে মাথার দিকে আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। পরিমাণে অল্প সংখ্যক কিছু গাছ থাকলেও সিজনের সময় প্রতি হাড়ি রস ২০০ টাকা থেকে শুরু করে আবার কোন স্থানে ৩০০ টাকা দামে বিক্রয় হয়। গাছিরা খেজুর গাছ ঝুড়লেই বোঝা যাবে প্রকৃতিতে এখন শীতের আগমনী বার্তা বইতে শুরু করেছে। শীতের সঙ্গে রয়েছে খেজুরের রসের এক অন্যরকম সম্পর্ক। খেজুরের রস দিয়ে বাঙালির ঐতিহ্য রসের পিঠা বা অন্যান্য পিঠা তৈরি করা হয়। তাই এই খেজুর গাছ বাঙালির এই গ্রামীণ ঐতিহ্যকে খেজুর গাছকে বাঁচাতে পরিবেশ প্রেমীসহ সকলের এগিয়ে আসা দরকার।

(বিএস/এসপি/আগস্ট ২০, ২০২৪)