ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকতা
নীহার রঞ্জন কুন্ডু, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব pressman for pressclub কেন হচ্ছে না? এর রহস্য উদঘাটন করা প্রয়োজন। প্রেসক্লাবের বাহিরে যারা আছেন, তারা কি সাংবাদিক নয়? তাদের পত্রিকা কি দেশের কথা জনগনের কথা লেখা হয় না? অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যখন লাভজনক হয়ে গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠান এর কর্তাব্যক্তিরা যখন দুর্নীতি অনিয়মের সিঁড়ি বেয়ে অনেক উপড়ে উঠার সুযোগ পেয়ে যায় তখন নিজ পেশার সহকর্মীদের অধিকার তো দুরের কথা প্রাপ্য সম্মান মর্যাদাটুকু হরণ করে বলা হয় এরা কি সাংবাদিক? যে সকল সাংবাদিক আর্থিক সংকটে ছিল, অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছিলো না তারা কেউ আবেদন করে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পয়সা পায়নি। যারা স্বচ্ছল ক্ষমতার কাছাকাছি ছিল তারা একাধিক বার সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে। এ বৈষম্য দুর করতেই আমরা বিগত সরকারের সময় থেকে আন্দোলন করছি।
আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের অনুদানের কোটি কোটি টাকা শুরু থেকে বিদায় লগ্ন পর্যন্ত যারা ভোগ করেছে, দালালী চামচামি চাটুকারিতা করে সুযোগ সুবিধা নিয়ে ছাত্র জনতার সংবাদ পরিবেশ থেকে বিরত ছিল এরা সকলেই প্রেসক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা পট পরিবর্ধনের সাথে সাথে দলীয় টেক পরিবর্তন করে বিএনপি ও ছাত্রদের আপনজন সেজে তাদের কূলে উঠে পুরোনো সুবিধার স্থান দখলে রাখতে নানা কূটকৌশল গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। এই প্রেসক্লাবের একাধিক ব্যক্তি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, এরা বিগত সরকারের উচ্ছিষ্ট খাবার গুলো গ্রহণ করতে দ্বিধা করেনি। কারণ এদের সভাপতি ময়মনসিংহের ডিসি, সরকারের সুযোগ সুবিধা তাদের জন্য।
এই প্রেসক্লাবের বাহিরে দুই শতাধিক সাংবাদিক রয়েছে যারা দিন রাত পরিশ্রম করে সংবাদ সংগ্রহ করে নিজ নিজ গণমাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করে কিন্তু তাদের অনেকের নেই মাসোহারা, নেই বিজ্ঞাপন, জীবন জীবিকা নির্বাহে কষ্টটা যে কত কষ্টের তা একজন সংবাদকর্মী বলতে পারেন। আমাদের সুবিধা বঞ্চিত সাংবাদিকদের এই পেশায় কাজ করতে যেয়ে নুন আনতে পানতা ফুরায়, সততা নিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সংবাদকর্মীরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে, পেশার সম্মান মর্যাদা অধিকার রক্ষার আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করা হয় তখন সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক সুবিধা নেওয়ার জন্য ওৎ পেতে থাকে।
সাংবাদিকদের সংগঠন বিএমইউজে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক খান এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কতিপয় চাটুকার দালাল, প্রতিহিংসা পরায়ণ হীনমন্যতা ভোগে, নিজ পেশার কিছু লোকজন আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে কাঁদা ছুরাছুড়ি শুরু করেছে। বেইমান মোনাফেক শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত, এই শব্দের মর্মার্থ বুঝে শুনে সাধু বেশী শয়তানদের চিহ্নিত করে নীতি নৈতিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিগত সরকারের এমপি মন্ত্রী মেয়র নেতাদের চাটুকারিতা করে সুযোগ সুবিধা নেওয়া অনেক গণমাধ্যম কর্মী দলীয় টেক পরিবর্তন করে আবারও সুবিধা ভোগীর কাতারে শামিল হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকদের নানা মতাদর্শ থাকতে পারে, সাংবাদিকতায় অনেক গুলো ক্যাটেগরি রয়েছে এ সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে বুঝে শুনে সাংবাদিক সম্পর্কে অনেকেই পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মন্তব্য করে ফেলেন। গণমাধ্যমে পেশার মর্যাদা যারা অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় তারা কখনও পারষ্পরিক মতপার্থক্য থাকলেও পেশার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে না। অহংকার, প্রতিহিংসা, হীনমন্যতা যাদের মাঝে বিদ্যমান রয়েছে তারা কখনও কোন ভাল কাজে কারো সহায়ক শক্তি হতে পারে না।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সংস্কার বিষয়ে আপনাদের নিয়ে pressman for pressclub করার দাবিতে যে আন্দোলনের সূচনা শুরু করা হয়েছিল, মানববন্ধন স্বারকলিপি সহ প্রতিটি কর্মকান্ড নিয়ে সকলেই অনেক লেখালেখি করে আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় এসে সেই সংস্কারই দাবি চলছে। তখন কে কোন দলের সে প্রশ্ন তো কাউকে করতে দেখি নাই কিন্তু এই অন্তর্বর্তী কলীন সরকারের সময় আওয়ামী লীগের দলীয় ছায়াতলে থেকে অর্থ কামানো এক সাংবাদিককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের হেনস্তা করতে বিএনপি/ জামাত নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, থানা পুলিশের কথা বলেছেন! সকল অফিসার ফোর্স এখনো চলে যায়নি, অনুরোধ তাদের থেকে জেনে নিন। অযথা অকারণে এতটায় মনে হলো যে ক্ষমতার প্রতিহিংসা, আর হীনমন্যতা কেন তাকে আঁকড়ে ধরেছে, তা কারো জানা নেই।
বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধা গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা দুর্নীতি অনিয়ম করেছেন এদের বিচার হউক, আর যারা সুবিধা বঞ্চিত ছিলো দলের যে ত্যাগীদের মূল্যায়ন হয় নাই তারা কেন হয়রানি নির্যাতনের শিকার হবে। আপনি সাংবাদিক যাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাদের শীর্ষ থেকে জেলার দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিন। সমালোচকদের বলি আগে নিজেকে জানুন, আবিস্কার করুন, অতপর অন্যের সাদা কাপড়ে কাঁদা ছিটানোর আগে ভাবুন আপনি সঠিক কাজটি করছেন কিনা। অন্যায় অপরাধ নির্মূলে আসুন সবাই একযোগে কাজ করি। সাংবাদিকদের অধিকার মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ থাকি।
(এনআরকে/এসপি/আগস্ট ২৬, ২০২৪)