মারুফ হাসান ভূঞা


ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে মাওলানা ফরহাদ মাজহার ফ্যাসিবাদী প্রক্রিয়ায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। আমরা এর পূর্বেও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সময়েও ফরহাদ মাজহার নানা কর্মকাণ্ডে সে বিষয় গুলো দেখেছি। উনি বরাবরের মত সন্ত্রাসবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সহানুভূতি মূলক বক্তব্য দিয়ে নিজেকে মহাত্মা গান্ধী রূপে আত্মপ্রকাশ করতে চান।

গত নির্বাচনের পূর্বে উনার যে রাজনৈতিক অবস্থান সেটিও বিতর্কিত ছিল। উনি মুখোশ পড়ে থাকেন বামপন্থা রাজনীতির কিন্তু উনি মূলত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ছায়া। গত নির্বাচনের পূর্বেও উনার রাজনৈতিক অবস্থান ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে বিজয় করা। যাতে তিনি ব্যর্থ হন। না উনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের প্রভাবে ব্যর্থ হননি, উনি নিজেই রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

বয়সের প্রবল চাপ ও উদ্দেশ্যহীন জীবনে উনার নানা প্রতিক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ কিন্তু বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক হিসেবে মোটামুটি দেশের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ উনাকে প্রবল ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু বিশ্বাস কোনোভাবেই করেন না, কারণ উনাকে কোনো নৈতিক মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা অসম্ভব! অসম্ভব! অসম্ভব।

উনার সমস্ত তত্ত্ব দূষণ ছড়ানো আশ্বাস, যা রাজনৈতিক বাস্তবতাকে কলঙ্কিত করে। অন্যদিকে বামপন্থা নিয়ে উনার মিথ্যা তত্ত্ব কিংবা মনগড়া বিচার সাধারণ মানুষের নিকট ভুল বার্তা হিসেবে উপস্থাপন হয়। অর্থাৎ স্পষ্টভাবে বিবেচনা করলে ফরহাদ মাজহারের বর্তমান অবস্থান খানিকটা মৌলবাদী শক্তির সংঘাতকে সক্রিয় করছে। এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক সচেতন মানুষের নিকট সন্দেহ তৈরি হচ্ছে মাওলানা ফরহাদ মজহারের ভূমিকা নিয়ে।

দেশে বিভিন্ন জায়গায় মৌলবাদী শক্তির যে অপ্রত্যাশিত কর্মকাণ্ড সেটি সম্পূর্ণ ভাবে নতুন নতুন বৈষম্য, বিভেদ ও বিদ্বেষের সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। একদিকে সাম্প্রদায়িক অরাজকতা অন্যদিকে ভিন্নমত দমন-পীড়নের প্রতিযোগিতা। কিংবা বিগত দিনে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি তৎপরতার সাথে যুক্ত সংগঠন ও ব্যক্তির মুক্ত পাদচারণা অবাধ বিচরণ। এসবকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে দেশে যাতে নতুন করে নতুন স্বৈরাচার, নতুন ফ্যাসিস্টের আবির্ভাব করা যায়।

আর এসবে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে সুবিধাবাদী হওয়ার যে চেষ্টা সেটি সম্পূর্ণ অপরাজনীতির মাধ্যম। যে অপরাজনীতির চর্চা ফরহাদ মাজহার নতুন করে আবির্ভাব করছেন। সেটি স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের শাসন আমলেও উনি করবার অপচেষ্টা করে আসছিলেন।

এ সময়ে এসে সে অপরাজনীতির চর্চাকে তীব্র ভাবে বাড়িয়েছেন। একদিকে অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে উনার কূটনীতিগত সমালোচনা ও অসন্তুষ্টি, অন্যদিকে সে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর ভর করে রাজনৈতিক বিচার, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি খবরদারি মূলক বক্তব্য দেওয়া স্পষ্টত দ্বিচারিতা মূলক ও অপরাজনৈতিক প্রক্রিয়া। পাশাপাশি বামপন্থা রাজনীতিকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা, বিবেচনা করে উদ্ভট মিথ্যাচার করা ফরহাদ মাজহারের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে ‘গণঅভ্যুত্থান ও গঠন: বাংলাদেশে রাজনৈতিক ধারার বিকাশ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক পাঠ পর্যালোচনাকালে ফরহাদ মাজহার বলেন “বাংলাদেশে বাম মানেই ফ্যাসিস্ট। কারণ তারা কোনো দিন কার্ল মার্কস পড়ে নাই, কংগ্রেসের ইশতেহার পড়ে নাই। বাংলাদেশে বামপন্থি মানেই ফ্যাসিবাদের আরেকটি রূপ। বাংলাদেশ এখনো ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে মুক্ত হয়নি।” এমন গুরুতর মিথ্যাচার ও সুবিধাজনক প্রলাপ খুবই নিন্দনীয়। যেটি উনি সর্বসময় বলে মানুষের মাঝে বিভ্রান্ত ও বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেন। উনার সঠিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের ব্যাপারেও উনি উদাসীন, যে সমস্যা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মধ্যেও ছিল। কী করছে, কী করবে, কী বলবে সবকিছু নিয়ে উদাসীনতা।

উদাসীনতার ফলে সিন্ধান্তহীনতায় ভীষণভাবে ভুগতে হয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে। ঠিক তেমনি উদাসীনতার ভার ফরহাদ মাজহারের চারিত্রিক আবরণে প্রদর্শিত হচ্ছে। অর্থাৎ ফরহাদ মাজহারের বক্তব্য, চিন্তা ছন্নছাড়া। যার ফলে কোনো একটা বিষয় নিয়ে সঠিক কোনো দৃষ্টিভঙ্গিতো বলতেই পারেন না বরং আরো জটিল ও সীমাবদ্ধ করে তোলেন।

সুতরাং ফরহাদ মাজহারের বক্তব্য ও মতামত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে, উনাকে মিথ্যা ও ভুল ব্যাখ্যার আশ্রয় নেওয়া বন্ধ করতে হবে। এবং উনার দীর্ঘদিনের যে অপরাজনীতির চর্চা, ভৌতিক কর্মকাণ্ড সেটাও বন্ধ করতে হবে। এই যে উনি উদ্ভট কার্যক্রম করছেন বক্তব্য, সেমিনারের মাধ্যমে সেসবের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদের রাজনীতি উসকানি পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ফরহাদ মাজহারকে আরো দ্বিগুণ সতর্ক হওয়া উচিত।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।