স্টাফ রিপোর্টার : জনতার এই আন্দোলনকে কেউ যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে দেশের ১৯টি কোটি মানুষ দাঁড়ের রুখে দিবে। আর জনগনের সাথে জামায়াতে ইসলামী অগ্রভাগে থাকবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, হাজারো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই বিপ্লব, এই পরিবর্তন, এই আন্দোলনের সফলতা একে অবশ্যই পাহারাদারি করতে হবে।

এর কোন ধরনের অপমান এই জাতি সহ্য করবে না। এই আন্দোলন বিশেষ কোন গোষ্ঠী, দলের বা সম্প্রদায়ের নয়। এখানে আপামর জনগন রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলনকে সফল করেছে। এখানে কোন নির্দিষ্ট ধর্মের লোকেরা শুধু লড়াই করে নাই, জাতি-দল-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর জনতার এই আন্দোলনকে কেউ যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ তাদের রুখে দিবে। আমরা সেই ১৮ কোটি মানুষের সাথে আমরা থাকব। জনগনের সকল আন্দোলনে জামায়াত সাথে থাকবে আমরা কথা দিচ্ছি।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে দিনাজপুর ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলা আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত রুদ্রসেন, অন্যান্য শহীদ ও আহতদের জন্য সমাবেশ ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথাগুলো বলেন।

দিনাজপুর উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এসময় জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর আফতাব উদ্দিন মোল্লা, জেলা উত্তর জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য এ্যাডঃ মাহবুবুর রহমান ভুট্টসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

তিনি আরও বলেন, ক্ষমতার মালাই খাওয়ার উদ্দেশ্য জামায়াতে ইসলামীর নেই। সমাজের একটু গুনগত পরিবর্তন আনা আমাদের উদ্দেশ্য। এমন একটি দেশ ও জগৎ চাই যেই দেশে জাতি-দল-ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। এদেশের নাগরিক হিসেবে দেশে এবং প্রবাশে যেখানে যাক গর্বের সাথে বলবে। আমার বাড়ীতে যদি পাহাড়া না লাগে, আমার মসজিদে যদি পাহাড়া না লাগে তাহলে হিন্দু বন্ধুদের মন্দিরে কেন পাহাড়ার প্রয়োজন হবে। আমরা এধরনের কোন বৈষম্য চাই না। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা যে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে করে গিয়েছে এর মাধ্যমে সকল প্রকার বৈষম্যের কবর রচনা হোক। বাংলাদেশ একটা বৈষম্য বিহীন দেশে পরিণত হোক। দুনিয়ার জাতি যেন আমাদেরকে নিয়ে গর্ব করে, এই জন্য একটি জাতি গঠন করতে চাই আমরা। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের কাছ এসেছি ঋন পরিশোধ করার জন্য।

জামায়াতের আমীর আরও বলেন, স্বৈরাচার শেষ দিনগুলোতে দিশেহারা হয়ে আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে। কোন মা তার সন্তান হারিয়েছেন, বাবা তার সন্তান হারিয়েছেন, স্ত্রী তার স্বামী হারিয়েছেন, ছোট সন্তানেরা তার বাবাকে হারিয়েছেন। ভাই হারিয়েছে বোনকে, বোন হারিয়েছে ভাইকে। ৬৫ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশ ছোপ ছোপ তাজা রক্তে ভরে উঠেছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম যেন বলতে পারে আমাদেরও আবু সাঈদ আছে। আমাদেরও রুদ্র আছে, আমাদেরও মুগ্ধ আছে। আমাদের এ রকম হাজারো বীর আছে। আমরা সেই বীরদের অনুসারি। তারা যেন অনুপ্রাণিত হয়। যেখানে আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাড়াকাড়ি-মারামারি হতো। মানুষ যে দিকে চলাফেরা করতে গেলে আতঙ্কে থাকতো। এখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-ছাত্রীরা বন্যার্ত্যদের পাশে দাড়িয়েছে। তাদের সাথে সাধারণ জনগনও দাড়িয়েছে।

অনুষ্ঠান শেষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সিলেট শাহজাহাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত রুদ্র সেনের বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলেন জামায়াতের আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৪)