স্টাফ রিপোর্টার : আ.লীগের জায়গায় নব্য দখলদার গোষ্ঠী স্যাটেল হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে লুটপাট করে খেতো, চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি করে খেতো, এখন কিন্তু আরেকটা নব্য দখলদার গোষ্ঠী সেই জায়গায় স্যাটেল হয়ে গেছে।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন৷ এর আগে তার দলকে নিবন্ধন সনদ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নুর বলেন, আগে আওয়ামী লীগ যেভাবে লুটপাট করে খেতো, চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি করে খেতো, এখন কিন্তু আরেকটা নব্য দখলদার গোষ্ঠী সেই জায়গায় স্যাটেল হয়ে গেছে। সেটা পরিবহন খাত যদি দেখেন, আগে যেখানে শাজাহান খান, এনায়েত উল্লাহরা ছিল, সেখানে কিন্তু আরেকটা সেটআপ বসে গেছে। শুধু পরিবহন খাতে না বিভিন্ন জায়গায়..।

তিনি বলেন, সরকারের ৮২ জন সচিব রয়েছেন। সবাই ফ্যাসিবাদের দালাল ছিলেন না। কাজেই ঢালাওভাবে ট্যাগ দেবেন না। যাদের স্পেসিফিক অপরাধ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ব্যবসায়ী যদি আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় অর্থ পাচার, দুর্নীতি করে থাকে, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই বলে কারও অধিকার নেই কারখানায় আগুন দেওয়ার বা দখল করার। অন্যায়ভাবে ভুক্তভোগী হলে তাদের পাশে থাকবো।

এক প্রশ্নের জবাবে ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচিত এই ভিপি (সাবেক) বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। আমরা প্রতিবেশী পাল্টাতে পারবো না। সম্পর্ক ভালো না হলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই আমরা চাই ভারত ও বাংলাদেশের একটা আন্তরিক ও সুসম্পর্ক থাকুক। কিন্তু আমরা দেখেছি ভারতের শাসকগোষ্ঠী সব সময় বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, দাবিয়ে রাখতে চায়, বাংলাদেশের ওপরে ছড়ি ঘোরাতে চায়। এই অবমূল্যায়ন করা, দাদাগিরি করা, এটা আমরা মানবো না। তারা যদি দাদাগিরির কর্তৃত্ববাদী ছড়ি ঘোরানোর নীতি পরিহার করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়তে চায়, আমরাও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলবো।

গণ অধিকার পরিষদ নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তথ্যের যে ঘাটতি ছিল, সেটার পূর্ণতা সাপেক্ষে আজকে আমাদের নিবন্ধন দিয়েছে, এজন্য আমরা ইসিকে ধন্যবাদ জানাই। এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। এখনো আছে। ২০২৪ সালের ভুয়া সংসদ নির্বাচনে সরকারের সহযোগী ছিল। গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদ যেভাবে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দখল করেছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে কাজ করাটা অনেকের জন্য অসম্ভব ছিল এটা সত্য। তার মধ্যেও নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য ছিল। তারা চাইলে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। গত বছর ইসিতে ৯২টি দল আবেদন করে। এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদ সমস্ত শর্ত পূরণ করায় ইসি তাদের নিবন্ধন দেওয়ার বিবেচনায় রাখে। কিন্তু তৎকালীন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা দল দু’টিকে নিবন্ধন দিতে নিষেধ করায় নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেয়নি।

নুরুল হক আরও বলেন, সে সময় নিবন্ধন না দিতে নানা অজুহাত দেখিয়েছিল। পরে ইসি তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ে তদন্ত করে। সেই তদন্ত কমিটি যথার্থতা পায়। গত বছর এই প্রতিবেদন তদন্ত কমিটি দেওয়ার পরও নিবন্ধন দেওয়া হয় নাই। এরপর পুনর্বিবেচনার জন্য সরকার পরিবর্তনের পর ফের আবেদন করি। আমরা কোর্টে না গিয়ে তাদের কাছেই আবেদন জানাই। তারা সব বিবেচনা করে নিবন্ধন দেয়। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।

নুর বলেন, এই গণ অধিকার পরিষদই ২০১৮ সালে সরকার পতনের আন্দোলনের বীজ রোপণ করে দিয়েছিল। সে সময় আংশিক দাবি পূরণ হওয়ায় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গণ অধিকার পরিষদ নামে দল গঠন করি। মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকি। তরুণরাই পারবে আগামীর বাংলাদেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে। নতুন এই দল গণ অধিকার পরিষদ হচ্ছে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক দল। এই দল যেন শক্তিশালী না হতো পারে, সেজন্য নানা প্রোপাগান্ডা হয়েছে। এখনো হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু আমরা বলতে চাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করেই কিন্তু আজকে আমরা আমাদের অবস্থান তৈরি করেছি। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। এখানে কেবল বয়সের তরুণ নয়, প্রতিবাদী তারুণ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৪)